সেকাল একাল
শহিদুল ইসলাম আকাশ
আমার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পড়ালেখায় সে এতোটাই মনোযোগী যে, ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে প্রাতরাশ সেরে পড়তে বসে, নয়টার কিছু পরে স্কুলে যায়। আগে আমি মোটরবাইকে করে স্কুলে দিয়ে আসতাম, আমার নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে প্রায়ই স্কুল কামাই হয়ে যেতো তখন। মাসছয়েক আগে মাসকাবারি হিসেবে একটা সিএনজি অটোরিকশা ঠিক করে দিয়েছি, স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার জন্য। এখন আর স্কুল কামাই হয় না খুব একটা। তারপরেও কখনো কোনো কারণে একদিন যদি স্কুল কামাই হয়েও যায়, তাতেও মেয়ের মনস্তাপের অন্ত থাকে না।
স্কুল থেকে ফিরে কিছুক্ষণ টিভি দেখে, তারপর গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে বসতে হয়। সন্ধ্যায় আবার আরবী পড়া, মৌলভী সাহেব আসেন তখন। আরবী পড়ার পর পরেরদিনের স্কুলের লেখাগুলো সম্পন্ন করে। তারপর খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষণ টিভি দেখে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে, সকালে আবার ভোরে উঠতে হবে যে!
ওর বয়সে থাকতে কেমন ছিলাম আমি? ফিরে দেখি একটু।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে প্রায়ই বেশ বেলা হয়ে যেতো, শত ডাকাডাকিতেও মা আমার ঘুম ভাঙাতে পারতো না। গৃহশিক্ষক ছিলো, সেই গৃহশিক্ষকের কাছে মাসের মধ্যে পাঁচটা দিনও পড়তে বসতাম না। গায়ে বেতের বাড়ি নিত্যদিনের ঘটনা ছিলো। স্কুলে যেতেই চাইতাম না, স্কুলের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হতাম ঠিকই, কিন্তু স্কুলে না-গিয়ে বইখাতা নিয়ে কয়েকজন সঙ্গীসহ লুকিয়ে থাকতাম বনবাদাড়ে। বিকেলে মাঠে খেলতে গিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেলেও বাসায় ফিরতাম না। পড়ালেখা বিষয়টা তখন যেন কোনো জগদ্দল পাথর, এড়িয়ে চলতে পারলেই বাঁচি। এমনই অবস্থা। আমার মেয়েটা আর আমার মধ্যে এই এক জায়গায় পার্থক্য ঢের।
মেয়েটা খাওয়াদাওয়ার পর আজ রাতে আর টিভি দেখতে বসেনি। স্কুলে নাকি মডেল টেস্ট হবে, এই নিয়ে ওর সে কী উৎকন্ঠা__কখনো পড়ছে, কখনো আবার লিখছে। অদূরে বসে আমি তাই দেখছি আর সাবধানে হাসছি। সাবধানে, যেন সে কিছুতেই দেখতে না-পায় আমার এই হাসি।
ওর বয়সে আমি যে পড়ালেখাকে এড়িয়ে চলতে পারলেই খুশি হতাম, তাতেই মেয়ের গভীর আগ্রহ দেখে ও শুনে এক ধরণের ভালো লাগা আচ্ছন্ন করে রাখে আমায়।
আমি সামনে দাঁড়িয়ে, চেয়ারে-বসা মেয়ের মাথায় হাত রাখি, বলি, 'রাত অনেক হয়ে যাচ্ছে, ঘুমোও এবার। সকালে তো ভোরেই উঠতে হবে।'
তখন সে কিছু একটা লিখছে, লিখতে লিখতেই বললো, 'আরেকটু লেখা বাকি, তারপরই ঘুমাবো, বাবা।'
আমার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পড়ালেখায় সে এতোটাই মনোযোগী যে, ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে প্রাতরাশ সেরে পড়তে বসে, নয়টার কিছু পরে স্কুলে যায়। আগে আমি মোটরবাইকে করে স্কুলে দিয়ে আসতাম, আমার নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে প্রায়ই স্কুল কামাই হয়ে যেতো তখন। মাসছয়েক আগে মাসকাবারি হিসেবে একটা সিএনজি অটোরিকশা ঠিক করে দিয়েছি, স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার জন্য। এখন আর স্কুল কামাই হয় না খুব একটা। তারপরেও কখনো কোনো কারণে একদিন যদি স্কুল কামাই হয়েও যায়, তাতেও মেয়ের মনস্তাপের অন্ত থাকে না।
স্কুল থেকে ফিরে কিছুক্ষণ টিভি দেখে, তারপর গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে বসতে হয়। সন্ধ্যায় আবার আরবী পড়া, মৌলভী সাহেব আসেন তখন। আরবী পড়ার পর পরেরদিনের স্কুলের লেখাগুলো সম্পন্ন করে। তারপর খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষণ টিভি দেখে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে, সকালে আবার ভোরে উঠতে হবে যে!
ওর বয়সে থাকতে কেমন ছিলাম আমি? ফিরে দেখি একটু।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে প্রায়ই বেশ বেলা হয়ে যেতো, শত ডাকাডাকিতেও মা আমার ঘুম ভাঙাতে পারতো না। গৃহশিক্ষক ছিলো, সেই গৃহশিক্ষকের কাছে মাসের মধ্যে পাঁচটা দিনও পড়তে বসতাম না। গায়ে বেতের বাড়ি নিত্যদিনের ঘটনা ছিলো। স্কুলে যেতেই চাইতাম না, স্কুলের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হতাম ঠিকই, কিন্তু স্কুলে না-গিয়ে বইখাতা নিয়ে কয়েকজন সঙ্গীসহ লুকিয়ে থাকতাম বনবাদাড়ে। বিকেলে মাঠে খেলতে গিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেলেও বাসায় ফিরতাম না। পড়ালেখা বিষয়টা তখন যেন কোনো জগদ্দল পাথর, এড়িয়ে চলতে পারলেই বাঁচি। এমনই অবস্থা। আমার মেয়েটা আর আমার মধ্যে এই এক জায়গায় পার্থক্য ঢের।
মেয়েটা খাওয়াদাওয়ার পর আজ রাতে আর টিভি দেখতে বসেনি। স্কুলে নাকি মডেল টেস্ট হবে, এই নিয়ে ওর সে কী উৎকন্ঠা__কখনো পড়ছে, কখনো আবার লিখছে। অদূরে বসে আমি তাই দেখছি আর সাবধানে হাসছি। সাবধানে, যেন সে কিছুতেই দেখতে না-পায় আমার এই হাসি।
ওর বয়সে আমি যে পড়ালেখাকে এড়িয়ে চলতে পারলেই খুশি হতাম, তাতেই মেয়ের গভীর আগ্রহ দেখে ও শুনে এক ধরণের ভালো লাগা আচ্ছন্ন করে রাখে আমায়।
আমি সামনে দাঁড়িয়ে, চেয়ারে-বসা মেয়ের মাথায় হাত রাখি, বলি, 'রাত অনেক হয়ে যাচ্ছে, ঘুমোও এবার। সকালে তো ভোরেই উঠতে হবে।'
তখন সে কিছু একটা লিখছে, লিখতে লিখতেই বললো, 'আরেকটু লেখা বাকি, তারপরই ঘুমাবো, বাবা।'
Comments
Post a Comment