ঈর্ষা

শহিদুল ইসলাম আকাশ

সুমন এসেছে আমার কাছে। বছর-ত্রিশের যুবক। আমার পরিচিত।

'কী রে সুমন কেমন আছিস? কী মনে করে?'

সুমন বললো, 'আছি ভালাই। এদিক দিইয়া যাইতাছিলাম, আপনার লগে একবার দেখা করনের ইচ্ছা হইলো।'

বাইরের বারান্দায় বসে আছি আমি। একটা চেয়ার বাড়িয়ে দিয়ে সুমনকেও বসতে দিলাম।

'তারপর...আর কী খবর?'

বললো, 'আগের চাকরিটা ছাইড়া দিছি। মালিক নিজেই চলবার পারতাছে না, আমারে বেতন দিইবো কী!'

বললাম, 'তাই বুঝি?'

সুমনের জন্য অবশ্য এটা নতুন না৷ গত দশ বছরে কমপক্ষে দশ থেকে বারোটা চাকরি ছেড়েছে সে। ক'দিন বা ক'মাস, দুয়েকটা চাকরি ক'য়েক বছর করেই ছেড়ে দিয়েছে সে। মাঝে দু'বার কীসব ব্যবসাটেবসাও করেছে, তাও স্থায়ী হয়নি। তিন মাস আগে এই নতুন চাকরিটাতে ঢুকেছে সে৷ একটা নিত্যপণ্যের দোকানের কর্মচারীর চাকরি।

বললাম, 'তো এখন কী করবি, ভেবেছিস কিছু?'

সুমনকে একটুও চিন্তিত মনে হলো না। বললো, 'বাপের কিছু জমিজিরাত আছে, ভাবতাছি অহন থাইকা এইগুলা চাষবাস করুম। বাপদাদার পেশায় ফিইরা যামু।'

বলেই হাসলো সে। আমি তার সেই হাসি দেখছি। যেন চাকরি ছেড়ে দেওয়াটাও এক ধরণের আনন্দের ব্যাপার।

সুমন ইচ্ছে করলেই যে কোনো কাজ ছেড়ে দিতে পারে-- আজ চাকরি তো কাল ব্যবসা। কী জানি, এই কৃষিকাজও কতোদিন ভালো লাগে তার! তারপর আবার নতুন কোনো পেশা বেছে নেবে সে।

কিন্তু আমি এবং আমরা? যতোই দুর্বিষহ হয়ে উঠুক না কেন, যতোই ক্লেদাক্ত হোক না কেন-- সুমনের সেই সাহস আমাদের অনেকেরই নেই। মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া ছাড়া।


সুমন ছেলেটা জানে না, এই মুহূর্তে মনে মনে কতোখানি ঈর্ষা করছি আমি তাকে।

Comments