স্বপ্নে পাওয়া
শহিদুল ইসলাম আকাশ
জ্বরজারি লেগেই আছে বাচ্চাটার। সেদিন এক ডক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। মাঝবয়সী পুরুষ ডাক্তার।
ডাক্তার সাহেব থার্মোমিটার বাচ্চার বগলের নিচে দিয়ে জ্বর মেপে দেখলেন। স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে বাচ্চার বুকের এদিকওদিক দেখতে লাগলেন। হাত দিয়ে সাবধানে পেটে চাপ দিলেন কয়েকবার। ওজন মাপার যন্ত্রে বাচ্চাকে দাঁড় করিয়ে ওজন মেপে নিলেন। বললেন, ভাইরাসের জ্বর, বুকে সামান্য কফও আছে।
ডাক্তার সাহেব যখন দাঁড়িয়ে বাচ্চাকে দেখছিলেন, তখন তাঁকে দাঁড়াতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো, কোথায় যেন তাঁর নিজেরও ব্যথা হচ্ছে মনে হলো। চেয়ারে যতোক্ষণ বসা ছিলেন, কেমন যেন আলগা হয়ে বসে ছিলেন। শরীরের ভার কিছুতেই যেন চেয়ারে পড়ছিলো না। তিনি কি পাইলসের রোগী? কিংবা পাইলসের অপারেশনটপারেশন করেননি তো!
তিনি আলগা হয়ে চেয়ারে বসা অবস্থায় প্রেসক্রিপশন লিখতে লাগলেন। লিখছেন আর বলছেন, কোন ঔষধ কীভাবে সেবন করতে হবে।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, ব্যথার স্পষ্ট ছাপ মুখাবয়বে। প্রেসক্রিপশন লেখার দিকে চোখ যেতেই হঠাৎ তাঁর হাতে চোখ আটকে গেলো আমার__হাতের চার আঙুলে নানান রঙের পাথর বসানো অনেকগুলো আঙটি পরে আছেন তিনি। কোনো কোনো আঙুলে একেরও অধিক।
আমি অবাক হলাম। একজন ডাক্তার, যিনি সমস্তপ্রকার কুসংস্কার থেকে দূরে থাকার কথা, তাঁর এ কী দশা! আমি আঙটিগুলো কীসের জানতে চাইলাম। তিনি বিশদ বিবরণে গেলেন না, প্রেসক্রিপশন লেখা থামিয়ে একটা একটা দেখিয়ে শুধু নাম বলতে লাগলেন। বললেন, 'এটার নাম 'রক্তপ্রবাল', আরবিতে মারজাম; এটা পান্না, এটা মুক্তো, এটা বেলজিয়াম জারকিম ডায়মন্ড, এটা ফিরোজা।' একটু থেমে আবার বললেন, 'ফিরোজা' অর্থ কী জানেন?' আমি ডানে ও বামে মাথা নাড়লাম। বললেন, 'ফিরোজা অর্থ হচ্ছে আকর্ষণ।'
একজন ডাক্তার, যিনি আকর্ষণের জন্য 'ফিরোজা' আঙটিতে ভরসা রাখেন, তাঁর কাছে রোগীর নিরাপত্তার বিষয়টি কেমন হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। ডাক্তার সাহেবের নিজের উপরই আস্থা নেই নিজের, তাঁর উপর আমার আস্থা রাখার কোনো মানে হয় না।
হঠাৎ মনে একটা দুষ্টু খেয়াল চলে এলো, বললাম, 'আপনার পাইলসের সমস্যা কতোদিন থেকে?'
তিনি চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকালেন, যেন এমন অদ্ভুত কথা জীবনে আর দ্বিতীয়টি শুনেননি। তাঁর বিস্ময়যুক্ত প্রশ্ন, 'আমার পাইলসের সমস্যার কথা আপনি কী করে জানলেন?'
আমি কোনো জবাব দিলাম না। অনুমানে ঢিল ছুঁড়েছি, তা যে ঠিক জায়গায় গিয়ে লেগে যাবে, ভাবিনি। ফি টা দিতে দিতে শুধু বললাম, 'আমার পরিচিত একজন স্বপ্নে পাওয়া পাইলসের ঔষধ দেন, তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তাঁর ঔষধে বেশ কাজ দেয়।'
তারপর তাঁর চেম্বার থেকে আমি দ্রুত বের হয়ে আসলাম এই ভয়ে__আবার যদি তিনি বলে বসেন, 'সে মানুষটার ফোন নাম্বার থাকলে দেন, সত্যিই যদি কাজে আসে!'
স্বপ্নে পাওয়া পাইলসের ঔষধ দেওয়া কারো সাথে যেহেতু আমার কোনো ধরণের জানাশোনা নেই, সেহেতু তেমন কারো নাম্বারও আমার কাছে থাকার কথা না। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সরে যাওয়াই উত্তম।
জ্বরজারি লেগেই আছে বাচ্চাটার। সেদিন এক ডক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। মাঝবয়সী পুরুষ ডাক্তার।
ডাক্তার সাহেব থার্মোমিটার বাচ্চার বগলের নিচে দিয়ে জ্বর মেপে দেখলেন। স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে বাচ্চার বুকের এদিকওদিক দেখতে লাগলেন। হাত দিয়ে সাবধানে পেটে চাপ দিলেন কয়েকবার। ওজন মাপার যন্ত্রে বাচ্চাকে দাঁড় করিয়ে ওজন মেপে নিলেন। বললেন, ভাইরাসের জ্বর, বুকে সামান্য কফও আছে।
ডাক্তার সাহেব যখন দাঁড়িয়ে বাচ্চাকে দেখছিলেন, তখন তাঁকে দাঁড়াতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো, কোথায় যেন তাঁর নিজেরও ব্যথা হচ্ছে মনে হলো। চেয়ারে যতোক্ষণ বসা ছিলেন, কেমন যেন আলগা হয়ে বসে ছিলেন। শরীরের ভার কিছুতেই যেন চেয়ারে পড়ছিলো না। তিনি কি পাইলসের রোগী? কিংবা পাইলসের অপারেশনটপারেশন করেননি তো!
তিনি আলগা হয়ে চেয়ারে বসা অবস্থায় প্রেসক্রিপশন লিখতে লাগলেন। লিখছেন আর বলছেন, কোন ঔষধ কীভাবে সেবন করতে হবে।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, ব্যথার স্পষ্ট ছাপ মুখাবয়বে। প্রেসক্রিপশন লেখার দিকে চোখ যেতেই হঠাৎ তাঁর হাতে চোখ আটকে গেলো আমার__হাতের চার আঙুলে নানান রঙের পাথর বসানো অনেকগুলো আঙটি পরে আছেন তিনি। কোনো কোনো আঙুলে একেরও অধিক।
আমি অবাক হলাম। একজন ডাক্তার, যিনি সমস্তপ্রকার কুসংস্কার থেকে দূরে থাকার কথা, তাঁর এ কী দশা! আমি আঙটিগুলো কীসের জানতে চাইলাম। তিনি বিশদ বিবরণে গেলেন না, প্রেসক্রিপশন লেখা থামিয়ে একটা একটা দেখিয়ে শুধু নাম বলতে লাগলেন। বললেন, 'এটার নাম 'রক্তপ্রবাল', আরবিতে মারজাম; এটা পান্না, এটা মুক্তো, এটা বেলজিয়াম জারকিম ডায়মন্ড, এটা ফিরোজা।' একটু থেমে আবার বললেন, 'ফিরোজা' অর্থ কী জানেন?' আমি ডানে ও বামে মাথা নাড়লাম। বললেন, 'ফিরোজা অর্থ হচ্ছে আকর্ষণ।'
একজন ডাক্তার, যিনি আকর্ষণের জন্য 'ফিরোজা' আঙটিতে ভরসা রাখেন, তাঁর কাছে রোগীর নিরাপত্তার বিষয়টি কেমন হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। ডাক্তার সাহেবের নিজের উপরই আস্থা নেই নিজের, তাঁর উপর আমার আস্থা রাখার কোনো মানে হয় না।
হঠাৎ মনে একটা দুষ্টু খেয়াল চলে এলো, বললাম, 'আপনার পাইলসের সমস্যা কতোদিন থেকে?'
তিনি চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকালেন, যেন এমন অদ্ভুত কথা জীবনে আর দ্বিতীয়টি শুনেননি। তাঁর বিস্ময়যুক্ত প্রশ্ন, 'আমার পাইলসের সমস্যার কথা আপনি কী করে জানলেন?'
আমি কোনো জবাব দিলাম না। অনুমানে ঢিল ছুঁড়েছি, তা যে ঠিক জায়গায় গিয়ে লেগে যাবে, ভাবিনি। ফি টা দিতে দিতে শুধু বললাম, 'আমার পরিচিত একজন স্বপ্নে পাওয়া পাইলসের ঔষধ দেন, তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তাঁর ঔষধে বেশ কাজ দেয়।'
তারপর তাঁর চেম্বার থেকে আমি দ্রুত বের হয়ে আসলাম এই ভয়ে__আবার যদি তিনি বলে বসেন, 'সে মানুষটার ফোন নাম্বার থাকলে দেন, সত্যিই যদি কাজে আসে!'
স্বপ্নে পাওয়া পাইলসের ঔষধ দেওয়া কারো সাথে যেহেতু আমার কোনো ধরণের জানাশোনা নেই, সেহেতু তেমন কারো নাম্বারও আমার কাছে থাকার কথা না। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সরে যাওয়াই উত্তম।
Comments
Post a Comment