বাবা

শহিদুল ইসলাম আকাশ

ছোটবেলায় কোরবানির গরু কিনতে গেলে, ভালোমন্দ বুঝার সময় তখনো হয়নি, তবু যে গরুটা কেনার জন্য বায়না করতাম, বাবার বাজেটের ঊর্ধ্বে হলেও বাবা সেই গরুটাই কিনতেন। সামর্থ্যের বাইরে গরু কেনায় পরবর্তী কয়েক মাস হয়তো বাবাকে অনেক মাশুল দিতে হতো।

আজ আমাদের গরু কেনা হলো। গরু কিনতে যাওয়ার আগে বাবাকে বললাম, আপনার যে গরুটা পছন্দ হবে, সেই গরুটাই কিনবেন। দ্বিতীয়বার ভাববেন না। জিতেছি কি ঠকেছি__এসব ভাবনা ভুলেও মাথায় রাখবেন না।

আমারও এক সাথে গরুর হাটে যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু ব্যস্ততার জন্য আমার যাওয়া হয়নি। বাবাকে বললাম, আপনি কাউকে সাথে নিয়ে যান। বাবা গেলেন।

গেলেন, কিন্তু একটু পরপর ফোন করতে লাগলেন, কেমন গরু কিনবেন, কী রঙ...নানান অভিমত জানতে চাইতে লাগলেন। বললাম, আপনার যেটা পছন্দ সেটাই কিনুন।

বাবার দুইটা গরু পছন্দ হয়েছে, একটার দাম ৭৬ হাজার টাকা চাইছে আরেকটা ৫৫ হাজার টাকা। ফোনে জানতে চাইলেন, কোনটা কিনবেন। যথারীতি বললাম, আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাই কিনে নিয়ে আসুন। ৭৬ হাজার টাকারটা নিলে আরো কিছু টাকা লাগবে, সেটাই নিয়ে নিন, আপনি হাটে থাকুন, আমি টাকা পাঠাবার ব্যবস্থা করছি।

বাবা ফোন কেটে দিলেন। পাঁচ মিনিট পর আবার বাবার ফোন, বললেন, ৫৫ হাজার টাকার গরুটা বাবার পছন্দ হয়েছে এবং সেটা কিনেও ফেলেছেন।

সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বাবা বেশ উৎসাহ নিয়ে গরু দেখালেন আমাকে। দেখে বললাম, খারাপ হয়নি কিন্তু আমার মনে হয় আপনি ৭৬ হাজার টাকা দামের যে গরুর কথা বলেছিলেন, সেটাই আপনার পছন্দ হয়েছিলো। ঠিক বলছি?

বাবা চুপ হয়ে গেলেন। বললেন, হ্যাঁ; কিন্তু ওটা নিলে বাড়তি অনেক টাকা খরচ করতে হতো। তাতে পরের মাসে হয়তো তোর জন্য সমস্যা হয়ে যেতো।

মনে মনে বললাম, আমাদের বায়না মেটাতে গিয়ে এক সময় মাসের পর মাস আপনাকে মাশুল দিতে হতো। নানা বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতো। ৭৬ হাজার টাকা দামের গরুটা কিনলেই পারতেন, হলে হতো পরবর্তী মাসে আমারও কিছু সমস্যা।   

Comments