একজনকে

শহিদুল ইসলাম আকাশ

তরুণ ডাক্তার সাহেব প্রেমে পড়েছেন এক তরুণী অধ্যাপিকার। অধ্যাপিকাটি আবার ভীষণ রোমান্টিক। প্রতিদিন কথা হয়, ফোনে অথবা চ্যাটে; মাঝেমাঝে দেখাও হয়। তবু দৃষ্টিনন্দন চিঠির পাতায় চিঠি লেখেন অধ্যাপিকা, তাঁর প্রিয়তম ডাক্তার সাহেবকে। 

ডাক্তার সাহেব প্রতিউত্তর চিঠিতে দেন না। চিঠি পড়ে ফোনে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। অধ্যাপিকার প্রতি ডাক্তার সাহেবের প্রেমও গভীর, অগাধ। আবার এই অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে চিঠি লেখাকে হাস্যকার বলেই মনে করেন তিনি। কিন্তু অধ্যাপিকা ডাক্তার সাহেবের কাছ থেকে চিঠিই প্রত্যাশা করেন। প্রায়ই তাঁর মনের এই আশার কথা ডাক্তার সাহেবকে বলেন তিনি।

একটা সময় ডাক্তার সাহেব অনন্যোপায় হয়ে প্রেসক্রিপশন লেখার পাতায় মাত্র কয়েক লাইনের হাতের লেখার একটা চিঠি লিখলেন অধ্যাপিকার উদ্দেশে। ইংরেজিতে। ডাক্তার সাহেব  ইংরেজিতে লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। উপরে ছাপার অক্ষরে নিজের নাম, সাথে তাঁর ডাক্তারির যোগ্যতাও আছে।

চিঠি হাতে নিয়ে থ হয়ে বসে রইলেন অধ্যাপিকা, এমনই জটিল হাতের লেখা যে, একজন অধ্যাপিকা হয়েও, কিছুতেই তার পাঠোদ্ধার করতে পারছেন না তিনি। চিঠিতে আসলেই কী লেখা, তা জানতে ডাক্তার সাহেবকে একবার ফোন করতে চাইলেন তিনি, কিন্তু ডাক্তার সাহেব বিব্রত হবেন এই আশংকায় অধ্যাপিকা আর ফোন করলেন না। উপায়ন্তর না-দেখে বাড়ির পাশের ফার্মেসিতে গেলেন চিঠিটা হাতে। ফার্মেসির সেলসম্যান চিঠিটা হাতে নিয়ে একটু চোখ বুলিয়েই বললেন, 'এখানে কিছু ওষুধের নাম আছে, কিন্তু ঔষধগুলো আমাদের দোকানে নেই।'

ঔষধ!

আসল কথা হচ্ছে, ডাক্তার সাহেব চিঠিতে অধ্যাপিকাকে অনেক অনেক ভালোবাসেন, এই কথাটাই ইংরেজিতে দুইবার লিখেছেন চিঠিতে। এটাই পাঠোদ্ধার করা প্রায় দুঃসাধ্য ঠেকেছে। অধ্যাপিকা পরে ডাক্তার সাহেবের কাছে এই বিষয়ে জেনে নিয়েছিলেন। জেনে কী যে এক ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় তাঁকে। 

ভালোবাসা মনের ব্যাপার। অনুভবেরও। সবসময় যে তা প্রকাশ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বুঝে নিতে হয় শুধু।

#একজনের_উদ্দেশ্যে   

Comments