বিয়ের শাড়ি

শহিদুল ইসলাম আকাশ

   বিয়ের শাড়ি কিনতে এসেছি। এক প্রতিবেশির মেয়ের বিয়ে। প্রতিবেশিটির জোরাজুরিতে আমাকেও শাড়ি পছন্দ করতে যেতে হলো। পছন্দও ঠিক না, পছন্দ করতে তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের কয়েকজন নারী এসেছেন। প্রতিবেশি বলে নিছক সৌজন্যতায় আমাকে ডেকে নেওয়া হয়তো। নয়তো শাড়িটাড়ি আমি তো বুঝি ও চিনিও না কিছু।

সেলসম্যান একগাদা শাড়ি নামালেন তাক থেকে। সবগুলোর রঙ লাল না-হলেও, লালই বেশি। বাকিগুলোও নানান বর্ণিল রঙের। কয়েরিরঙা একটা শাড়ি বেছে নেওয়া হলো। দরদাম শেষে কিনে ফেলাও হলো। 

প্রতিবেশিটি শাড়িটা কেমন হলো জানতে চাইলেন। বললাম, 'ভালোই তো।' তারপর বললাম, 'আপনার মেয়েকেও সাথে নিয়ে আসা উচিত ছিলো। তারও তো পছন্দ-অপছন্দের কিছু থাকতে পারে।' তিনি জানালেন, 'মেয়ের পছন্দের রঙই কেনা হয়েছে।' বললাম, 'তাহলে ঠিক আছে।'

অঞ্চল সংস্কৃতি ভেদে মেয়েদের বিয়ের পোশাকের রঙয়ের ভিন্নতা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে বিয়ের পোশাক লাল অথবা অন্য কোনো বর্ণিল রঙের হয়। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় মেয়েদের বিয়ের পোশাক হয় ধবধবে সাদা।

এই উপমহাদেশে সাদা বৈধব্যের রঙ, অন্য দেশে তা-ই আবার মিলনের আনন্দ। এক দেশে যে পোশাক শোকের, আরেক দেশে তা-ই মিলনের প্রতীক হয় কী করে, এমন প্রশ্ন মনে উদয় হওয়াই স্বাভাবিক।

কিন্তু অনেকেই জানে না হয়তো যে, একটা সময় ইউরোপ আমেরিকাতেও বিয়েতে মেয়েদের পোশাক সাদা ছিলো না। ম্যারি স্টুয়ার্ট নামে স্কটল্যান্ডের এক রানী প্রথম এই প্রথা ভেঙেছিলেন। সাদা ছিলো সেই রানীর প্রিয় রঙ। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, নিজের বিয়েতে তিনি সাদা পোশাকই পরবেন। এবং পরলেনও। সেই থেকে বিয়েতে মেয়েদের সাদা পোশাক পরার রীতি চালু হয় সেখানে। যে রীতি এখনো চলছে সেইসব দেশে। ম্যারি স্টুয়ার্ট নামের এক কিশোরী রানীর প্রিয় সাদা রঙ, এতোকাল পরেও সেই সব দেশের সকল নারীর বিয়ের পোশাকের প্রিয় রঙ হয়ে আছে। কিন্তু ম্যারি স্টুয়ার্টের প্রিয় ছিলো বলে সেই একই রঙের পোশাকই সবার প্রিয় হতে হবে, এই ব্যাপারটা আমার কেমন জানি লাগে। বিয়ে তো জীবনের প্রধানতম স্মরনীয় একটি ব্যাপার, সেখানে পাত্র হোক কি পাত্রীর নিজের পছন্দের পোশাক হবে না, সেটা কেমন কথা?

আমার প্রতিবেশির মেয়েটাকে কয়েরি রঙা শাড়িটাতে বিয়ের দিন কেমন দেখায় কে জানে! যেমনই লাগুক, তার নিজের পছন্দের রঙ, এটাই সবচেয়ে বড় কথা। মেয়েটার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনটি স্মরনীয় হয়ে থাকুক।

Comments