দুই দিকেই টান
শহিদুল ইসলাম আকাশ
বাসায় ফিরেছি রাত এগারোটায়। দেখি ড্রয়িংরুমে আলতাফ সাহেব বসে আছেন। আমার সাথে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক না-থাকলেও, সম্পর্কটা অনেকটা আত্মীয়ের মতোই।
আলতাফ সাহেবের বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। মাথার দুই পাশে চুলগুলোও পেকে গেছে। খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি ও গোঁফের অর্ধেকই পাকা। এই অসময়ে আমার বাসায় আসার কারণ জানতে চাইলাম তাঁর কাছে।
আলতাফ সাহেব বললেন, তাঁর স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয়েছে। তুমুল ঝগড়া নাকি। আমি ঝগড়ার ধরণ জানতে চাইলাম। আলতাফ সাহেব বললেন, 'তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া। মেয়ের জন্য একটা ছাতা আনতে বলেছিলো, ভুলে গেছি, বিকেলে অফিস থেকে ফিরতেই এই নিয়ে ঝগড়া। এক পর্যায়ে সে কী বলে জানেন? বললো, 'স্বামী মারা গেলে অনেকেই সন্তানসন্ততি নিয়ে দিব্যি বেঁচে থাকে। তুমি না-থাকলেও যে আমার চলবে না, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।' কী থেকে কী বলে দেখলেন? রাগে তখনই বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি।'
আমি আমার স্ত্রীকে ভাত বাড়তে বললাম। আলতাফ সাহেবকে বললাম, 'আসুন আগে খাওয়াদাওয়া সেরে নিই। পরে বিস্তারিত শুনবো।' সুবোধ বালকের মতো ডাইনিংরুমে গিয়ে আমার সাথে খেতে বসলেন তিনি।
খেতে যেই বসেছি, ওমনি দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। আলতাফ সাহেবকে খাওয়ার টেবিলে রেখে আমি দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলতেই দেখি আলতাফ সাহেবের স্ত্রী। তিনি হুড়মুড় করে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসতে বসতে বললেন, 'আমার স্বামী রাগ করে হঠাৎ কোথায় জানি চলে গেছে। আপনি একটু যদি খবর লাগাতেন, আপনার তো সবদিকে অনেক জানাশুনা।'
আমি আলতাফ সাহেব কোথায় আছেন, তা না-জানার ভান করে বললাম, 'কোথায় যাওয়ার সম্ভাবনা করছেন আপনি?' আলতাফ সাহেবের স্ত্রী বললেন, 'বুঝতে পারছি না। তেমন কোনো সম্ভাবনা আমার জানা নেই। এর আগে সে এমন করে যায়নি কখনো।'
বললাম, 'আছে হয়তো কোথাও। সময়মত ঠিকই ফিরে আসবেন।'
এবার হুহু করে কেঁদে উঠলেন তিনি, বললেন, 'ওর মারাত্মক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে। রাত সাড়ে আটটায় ঔষধ খেতে হয় ওকে, ন'টায় ভাত খেয়ে নিতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলে সারারাত ঘুমাতে পারে না সে। তারউপর সে হার্টেরও জটিল অসুখে ভুগছে। প্লিজ, আপনি একটু ওকে খুঁজে বের করার চেষ্টা যদি করতেন!'
আমি আলতাফ সাহেবকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়ে আলতাফ সাহেবের স্ত্রীকে বাসায় ফিরে যেতে বললাম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি চলে গেলেন। আমি দরজা বন্ধ করে পাশ ফিরতেই দেখি, খাবার টেবিল থেকে কখন আলতাফ সাহেব আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আড়াল থেকে নিশ্চয় তাঁর স্ত্রীকে দেখছিলেন। আলতাফ সাহেবের চোখেও অশ্রু টলমল। দেখে বড় মায়া লাগলো।
অনেকেই বলেন, দাম্পত্যে অভ্যাসকেই ভালোবাসা বলে চালিয়ে দেয় মানুষ, কথাটা ঠিক? উঁহু, আমার তা মনে হয় না, দাম্পত্যই হয়তো প্রকৃত ভালোবাসা, যে ভালোবাসায় দুই দিকেই টান থাকে প্রবল।
আমি খাওয়াদাওয়া সেরে আলতাফ সাহবেকে নিয়ে বের হলাম, বললাম, চলুন বাসায় দিয়ে আসি আপনাকে। আলতাফ সাহেবও রাজি হলেন যেতে।
মধ্যরাত। চারপাশে সুনসান নীরবতা। নিঃশব্দে আমি আর আলতাফ সাহেব হাঁটছি। বাসায় প্রিয়তম স্ত্রী ও পরম স্নেহের দুই সন্তান নিশ্চয় তাঁর জন্য নির্ঘুম চোখে অধীর অপেক্ষায় বসে আছে, হঠাৎ আলতাফ সাহেবকে পেয়ে তারা নিশ্চয় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠবে! তাদের সেই অপার উচ্ছ্বাস দেখার খুব ইচ্ছা আমার।
বাসায় ফিরেছি রাত এগারোটায়। দেখি ড্রয়িংরুমে আলতাফ সাহেব বসে আছেন। আমার সাথে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক না-থাকলেও, সম্পর্কটা অনেকটা আত্মীয়ের মতোই।
আলতাফ সাহেবের বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। মাথার দুই পাশে চুলগুলোও পেকে গেছে। খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি ও গোঁফের অর্ধেকই পাকা। এই অসময়ে আমার বাসায় আসার কারণ জানতে চাইলাম তাঁর কাছে।
আলতাফ সাহেব বললেন, তাঁর স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয়েছে। তুমুল ঝগড়া নাকি। আমি ঝগড়ার ধরণ জানতে চাইলাম। আলতাফ সাহেব বললেন, 'তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া। মেয়ের জন্য একটা ছাতা আনতে বলেছিলো, ভুলে গেছি, বিকেলে অফিস থেকে ফিরতেই এই নিয়ে ঝগড়া। এক পর্যায়ে সে কী বলে জানেন? বললো, 'স্বামী মারা গেলে অনেকেই সন্তানসন্ততি নিয়ে দিব্যি বেঁচে থাকে। তুমি না-থাকলেও যে আমার চলবে না, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।' কী থেকে কী বলে দেখলেন? রাগে তখনই বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি।'
আমি আমার স্ত্রীকে ভাত বাড়তে বললাম। আলতাফ সাহেবকে বললাম, 'আসুন আগে খাওয়াদাওয়া সেরে নিই। পরে বিস্তারিত শুনবো।' সুবোধ বালকের মতো ডাইনিংরুমে গিয়ে আমার সাথে খেতে বসলেন তিনি।
খেতে যেই বসেছি, ওমনি দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। আলতাফ সাহেবকে খাওয়ার টেবিলে রেখে আমি দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলতেই দেখি আলতাফ সাহেবের স্ত্রী। তিনি হুড়মুড় করে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসতে বসতে বললেন, 'আমার স্বামী রাগ করে হঠাৎ কোথায় জানি চলে গেছে। আপনি একটু যদি খবর লাগাতেন, আপনার তো সবদিকে অনেক জানাশুনা।'
আমি আলতাফ সাহেব কোথায় আছেন, তা না-জানার ভান করে বললাম, 'কোথায় যাওয়ার সম্ভাবনা করছেন আপনি?' আলতাফ সাহেবের স্ত্রী বললেন, 'বুঝতে পারছি না। তেমন কোনো সম্ভাবনা আমার জানা নেই। এর আগে সে এমন করে যায়নি কখনো।'
বললাম, 'আছে হয়তো কোথাও। সময়মত ঠিকই ফিরে আসবেন।'
এবার হুহু করে কেঁদে উঠলেন তিনি, বললেন, 'ওর মারাত্মক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে। রাত সাড়ে আটটায় ঔষধ খেতে হয় ওকে, ন'টায় ভাত খেয়ে নিতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলে সারারাত ঘুমাতে পারে না সে। তারউপর সে হার্টেরও জটিল অসুখে ভুগছে। প্লিজ, আপনি একটু ওকে খুঁজে বের করার চেষ্টা যদি করতেন!'
আমি আলতাফ সাহেবকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়ে আলতাফ সাহেবের স্ত্রীকে বাসায় ফিরে যেতে বললাম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি চলে গেলেন। আমি দরজা বন্ধ করে পাশ ফিরতেই দেখি, খাবার টেবিল থেকে কখন আলতাফ সাহেব আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আড়াল থেকে নিশ্চয় তাঁর স্ত্রীকে দেখছিলেন। আলতাফ সাহেবের চোখেও অশ্রু টলমল। দেখে বড় মায়া লাগলো।
অনেকেই বলেন, দাম্পত্যে অভ্যাসকেই ভালোবাসা বলে চালিয়ে দেয় মানুষ, কথাটা ঠিক? উঁহু, আমার তা মনে হয় না, দাম্পত্যই হয়তো প্রকৃত ভালোবাসা, যে ভালোবাসায় দুই দিকেই টান থাকে প্রবল।
আমি খাওয়াদাওয়া সেরে আলতাফ সাহবেকে নিয়ে বের হলাম, বললাম, চলুন বাসায় দিয়ে আসি আপনাকে। আলতাফ সাহেবও রাজি হলেন যেতে।
মধ্যরাত। চারপাশে সুনসান নীরবতা। নিঃশব্দে আমি আর আলতাফ সাহেব হাঁটছি। বাসায় প্রিয়তম স্ত্রী ও পরম স্নেহের দুই সন্তান নিশ্চয় তাঁর জন্য নির্ঘুম চোখে অধীর অপেক্ষায় বসে আছে, হঠাৎ আলতাফ সাহেবকে পেয়ে তারা নিশ্চয় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠবে! তাদের সেই অপার উচ্ছ্বাস দেখার খুব ইচ্ছা আমার।
Comments
Post a Comment