নষ্ট কষ্ট

শহিদুল ইসলাম আকাশ 

   মাঝেমাঝে এমন হয় আমার, লিখতে বসলে কিছুই লিখতে পারি না। ঠিক কিছুই অবশ্য না, অক্ষরের পর অক্ষর দিয়ে শব্দ গাঁথি, বাক্য তৈরি করি, প্যারা বানাই__ওইটুকুই। কিন্তু সে লেখায় প্রাণ খুঁজে পাই না। আমার ভেতরটা হাহাকারে পূর্ণ হয়ে উঠে তখন। দিনমান হাজার ব্যস্ততায় লেখা এবং পড়ার জন্য যে সময়টা প্রয়োজন, বলতে গেলে সময়টুকু পাওয়া হয়েই উঠে না একেবারে। 

মানুষের জীবনটা অর্ধেক আশায় আর বাকি অর্ধেক কারো উষ্ণ হাতের স্পর্শের অপেক্ষাতেই কেটে যায়। এই আশা এই অপেক্ষা জীবনে না-থাকলেই বোধহয় ভালো হতো। কিংবা কী জানি, হয়তো এই দুই আকাঙ্ক্ষা আছে বলেই জীবনটা এতোটা তাৎপর্যময় আমাদের সবারই।

সেদিন একজন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, রাতে যেসব ফুল ফুটে, তার বেশিরভাগের রঙই সাদা হয় কেন? এতো তীব্র সুগন্ধিও? 

আরেকজন জানতে চেয়েছিলেন, হৃদয় থেকে নিঃশ্বাসের দূরত্ব কতোটুকু?

অন্য একজনের ছিলো গাঢ় বিস্ময়, 'আমাকে ভুলে যেও' আর 'আমাকে মনে রেখো'__এর মাঝে এমন কীইবা পার্থক্য আছে? এই দুই কথারই অর্থ কি এক নয়?

রাতে ফুটা বেশিরভাগ ফুলই যে সাদা হয় এবং তীব্র সুগন্ধিও, হৃদয় থেকে নিঃশ্বাসের দূরত্বের পরিধি আর ভুলে যাওয়া ও মনে রাখার যে সমীকরণ__এইসবের কিছুই জানা ছিলো না আমার। কতো কিছুই যে অজানা রয়ে গেলো এইটুকু জীবনে! এইসব কিছু ছাপিয়ে লিখতে না-পারার কষ্টে হাহাকার করে উঠার কীইবা মানে হয়!

কোনো মানে থাকার কথা নয়। কিন্তু একবার যাকে লেখার নেশায় পেয়েছে, সেই-ই শুধু জানে এ নেশা কেমন মরণনেশা! যে নেশা কাটে না সহজেই। এরপর লেখাই হয়ে উঠে তার জীবন, তিলে তিলে ভয়াবহ মৃত্যুও।

মৃত্যুতে ভয় করি না আমি। একদিন আমাকেও জানি মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হবে। কী আছে মৃত্যুর পরে, জানি না আমি। আমি জানি না, নরক কেমন; জানি না, কেমন তার দহনজ্বালা। স্বর্গেরও জানি না কিছু। কে জানে, স্বর্গের 'হুর' নামের মেয়েরাও এই পৃথিবীর মেয়েদের মতোই নিষ্ঠুর, নির্দয় ও হৃদয়হীন কিনা!

জানবার ইচ্ছেও জাগে না মনে। পৃথিবীরই কতো কিছু এখনো অজানাই রয়ে গেলো__স্বর্গ ও নরক তো বহুদূর!

ইচ্ছে শুধু এইটুকুই__মৃত্যুর পরে আমি আরো একবার জন্ম নিতে চাই পৃথিবীতে। জন্ম নিতে চাই এই জন্যই যে, তখন শুধুই মানুষকে ভালোবাসবো আর দু'হাত ভরে লিখবো। গত জন্মের অপূর্ণতার নষ্ট কষ্ট পুষিয়ে দেবো তখন।

Comments