ইনবক্স কথন
শহিদুল ইসলাম আকাশ
:তুমি ভীষণ বদলে গেছো আকাশ। ফেসবুকে কী সব ছাইপাঁশ লিখো আজকাল, তোমার তো একটা জীবন শুধু কবিতা লেখারই কথা ছিলো! কেন এমন হলো বলো?
: জানোই তো, জীবন আমাদের কারোরই হাতের মুঠোয় থাকে না। আঁজলা গলে বেরিয়েই যায়। মিতু, এই কারণেই হয়তো আমরা সুখী হয়েও সুখী নই কেউ।
: তোমার কি মনে আছে সেই সব দিন, আকাশ--বৃষ্টি পড়লে আমাকে তুমি চিঠি লিখতে বসে যেতে, এমনকি প্রতি জোছনায়ও?
: হুম। খুব আছে। আমি যখন বৃষ্টির সময় চিঠিতে লিখতাম, 'এই বৃষ্টি ভেজাবে ভীষণ' কিংবা জোছনায় 'চাঁদ আজ পৃথিবীর খুব নিকটে নেমে আসবে দেখো'--তখন তুমি ফিরতি চিঠিতে আমাকে লিখতে 'শুধু আবহাওয়ার সংবাদ দিতেই চিঠি দাও বুঝি?'
: আমার চিঠি পড়ে তুমি খুব হাসতে, তাই না? তারপর কখনো দেখা হলে তুমি মুখে মুখে আমাকে শুনাতে তোমার না-লেখা কবিতার পঙক্তিমালা। আমি এখনো মন বাড়িয়ে সেই সব দিন ছুঁয়ে দিতে চাই, কিন্তু ছুঁতে গেলেই কোথায় জানি টান লাগে। থমকে যেতে হয় হঠাৎ তখন।
: কী দ্রুতই না জীবনটা বদলে যায়, তাই না মিতু? আমাদের সকলেরই?
: হ্যাঁ, দ্রুতই। যতোই তোমাকে বলি না কেন যে, তুমি বদলে গেছো; বদলে কি যায়নি আমিও?
: গিয়েছো জানি। তুমি গান গাইতে খুব সুন্দর করে, গান গাইতে ভালোবাসতে। ত্রিকালভুলানো গানের গলা ছিলো তোমার। তোমারও কথা ছিলো একটা জীবন শুধু গানই গাইবে তুমি, কিন্তু তা আর তোমারও হলো কই? সব ভুলে পুরোদস্তুর সংসারী এখন তুমি।
: বলির পাঁঠা আর কাঠগড়ার আসামী তো দেখেছো নিশ্চয়? এই দুইয়েরই নিজের ইচ্ছা কি অনিচ্ছার কোনো দাম থাকে না। জীবনেও আমরা সবাই এক-একজন বলির পাঁঠা যেন, অদৃশ্য কাঠগড়ায় হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে-থাকা এক-একজন অভিযুক্ত আসামী--এখানে আমাদেরও ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কোনো দাম নেই, থাকেও না।
: ঠিকই বলেছো, মিতু। আমরা প্রত্যেকের ভেতরেই একজন বৈরাগী বাস করে। পরনে গেরুয়া না থাকলেও মনে মনে প্রত্যেকেই সন্ন্যাসী যেন। আফসোস, তা মনে মনেই শুধু।
: কিন্তু আমার এখন কী মনে হয় জানো আকাশ? মনে হয়, এই যে নিরন্তর মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার ক্লান্তিকর কুচকাওয়াজ, জীবনের যুদ্ধে নিয়ত অসহায় আত্মসমর্পণ--অন্যদিকে ভেতরে ভেতরে নিয়মভাঙার তুমুল বিদ্রোহ--এই নিয়ে বেঁচে থাকা কোনো অর্থই বহন করে না। একটামাত্র জীবন, সেই জীবনটাতেই যদি নিজের ইচ্ছেমত বেঁচে না-ই থাকা যায়, তাহলে জীবনটা কি মূল্যহীন কোনো নিলামী অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু?
: তবু এটাই জীবন, মিতু। দিন শেষে তোমার, আমার, আমাদের সকলেরই। এই সত্যটা স্বীকার না-করে উপায়ও কি আছে কোনো?
: না, উপায় যে নেই তা আমিও জানি আকাশ। কিন্তু তা মেনে নিতে বড্ড বেশি কষ্ট হয়।
: এই কষ্ট সবারই কমবেশি আছে, মিতু। তবু আমরা এমন একটা ঠিকানা খুঁজে বেড়াই জীবনভর, যেখানে নিশ্চিন্তে পালিয়ে থাকা বা লুকিয়ে থাকা যায়। কিন্তু তা যে পাওয়া হয় না কখনো; কারোরই।
: আহা, যদি পাওয়া হতো! পাওয়া যদি যেতো এমনই কোনো আরাধ্য ঠিকানা, যেখানে গেলে অদ্ভুত এক ভালো লাগা ও ভালোবাসার আশ্লেষে আবার নতুন করে ফিরে পাওয়া যেতো হারিয়ে-যাওয়া সেই 'আমি'কে! যেতো যদি!
:তুমি ভীষণ বদলে গেছো আকাশ। ফেসবুকে কী সব ছাইপাঁশ লিখো আজকাল, তোমার তো একটা জীবন শুধু কবিতা লেখারই কথা ছিলো! কেন এমন হলো বলো?
: জানোই তো, জীবন আমাদের কারোরই হাতের মুঠোয় থাকে না। আঁজলা গলে বেরিয়েই যায়। মিতু, এই কারণেই হয়তো আমরা সুখী হয়েও সুখী নই কেউ।
: তোমার কি মনে আছে সেই সব দিন, আকাশ--বৃষ্টি পড়লে আমাকে তুমি চিঠি লিখতে বসে যেতে, এমনকি প্রতি জোছনায়ও?
: হুম। খুব আছে। আমি যখন বৃষ্টির সময় চিঠিতে লিখতাম, 'এই বৃষ্টি ভেজাবে ভীষণ' কিংবা জোছনায় 'চাঁদ আজ পৃথিবীর খুব নিকটে নেমে আসবে দেখো'--তখন তুমি ফিরতি চিঠিতে আমাকে লিখতে 'শুধু আবহাওয়ার সংবাদ দিতেই চিঠি দাও বুঝি?'
: আমার চিঠি পড়ে তুমি খুব হাসতে, তাই না? তারপর কখনো দেখা হলে তুমি মুখে মুখে আমাকে শুনাতে তোমার না-লেখা কবিতার পঙক্তিমালা। আমি এখনো মন বাড়িয়ে সেই সব দিন ছুঁয়ে দিতে চাই, কিন্তু ছুঁতে গেলেই কোথায় জানি টান লাগে। থমকে যেতে হয় হঠাৎ তখন।
: কী দ্রুতই না জীবনটা বদলে যায়, তাই না মিতু? আমাদের সকলেরই?
: হ্যাঁ, দ্রুতই। যতোই তোমাকে বলি না কেন যে, তুমি বদলে গেছো; বদলে কি যায়নি আমিও?
: গিয়েছো জানি। তুমি গান গাইতে খুব সুন্দর করে, গান গাইতে ভালোবাসতে। ত্রিকালভুলানো গানের গলা ছিলো তোমার। তোমারও কথা ছিলো একটা জীবন শুধু গানই গাইবে তুমি, কিন্তু তা আর তোমারও হলো কই? সব ভুলে পুরোদস্তুর সংসারী এখন তুমি।
: বলির পাঁঠা আর কাঠগড়ার আসামী তো দেখেছো নিশ্চয়? এই দুইয়েরই নিজের ইচ্ছা কি অনিচ্ছার কোনো দাম থাকে না। জীবনেও আমরা সবাই এক-একজন বলির পাঁঠা যেন, অদৃশ্য কাঠগড়ায় হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে-থাকা এক-একজন অভিযুক্ত আসামী--এখানে আমাদেরও ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কোনো দাম নেই, থাকেও না।
: ঠিকই বলেছো, মিতু। আমরা প্রত্যেকের ভেতরেই একজন বৈরাগী বাস করে। পরনে গেরুয়া না থাকলেও মনে মনে প্রত্যেকেই সন্ন্যাসী যেন। আফসোস, তা মনে মনেই শুধু।
: কিন্তু আমার এখন কী মনে হয় জানো আকাশ? মনে হয়, এই যে নিরন্তর মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার ক্লান্তিকর কুচকাওয়াজ, জীবনের যুদ্ধে নিয়ত অসহায় আত্মসমর্পণ--অন্যদিকে ভেতরে ভেতরে নিয়মভাঙার তুমুল বিদ্রোহ--এই নিয়ে বেঁচে থাকা কোনো অর্থই বহন করে না। একটামাত্র জীবন, সেই জীবনটাতেই যদি নিজের ইচ্ছেমত বেঁচে না-ই থাকা যায়, তাহলে জীবনটা কি মূল্যহীন কোনো নিলামী অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু?
: তবু এটাই জীবন, মিতু। দিন শেষে তোমার, আমার, আমাদের সকলেরই। এই সত্যটা স্বীকার না-করে উপায়ও কি আছে কোনো?
: না, উপায় যে নেই তা আমিও জানি আকাশ। কিন্তু তা মেনে নিতে বড্ড বেশি কষ্ট হয়।
: এই কষ্ট সবারই কমবেশি আছে, মিতু। তবু আমরা এমন একটা ঠিকানা খুঁজে বেড়াই জীবনভর, যেখানে নিশ্চিন্তে পালিয়ে থাকা বা লুকিয়ে থাকা যায়। কিন্তু তা যে পাওয়া হয় না কখনো; কারোরই।
: আহা, যদি পাওয়া হতো! পাওয়া যদি যেতো এমনই কোনো আরাধ্য ঠিকানা, যেখানে গেলে অদ্ভুত এক ভালো লাগা ও ভালোবাসার আশ্লেষে আবার নতুন করে ফিরে পাওয়া যেতো হারিয়ে-যাওয়া সেই 'আমি'কে! যেতো যদি!
Comments
Post a Comment