অসুখ-বিসুখে
শহিদুল ইসলাম আকাশ
মিজানকে একটা ফোন করা দরকার। গতরাতে সে তার 'দেশের বাড়ি' নেত্রকোনা যেতে গাড়িতে উঠেছিলো, তখন ফোন দিয়েছিলো আমাকে। এরপর আর কথা হয়নি। এতোক্ষণে নিশ্চয় তার বাড়িতে পৌঁছে যাবার কথা। পৌঁছেছে কি!
মিজান একটা সরকারি অফিসের পিয়ন। আমারই সমবয়সী হবে। এখানে আছে বেশ কয়েক বছর ধরে। আমার সাথে পরিচয়টাও অনেকদিনের। সবসময় হাসিখুশি থাকে সে, সবচেয়ে বড় কথা সে বেশ সাহিত্যানুরাগী, নিয়মিতই বইটই পড়ে।। এই কারণেই মিজানকে ভালো লাগে আমার।
কখনো কখনো আমি মিজানকে ডেকে দোকানে গিয়ে চা-টা খাই। প্রথম প্রথম সে ইতস্তত করতো, একজন পিয়নের সাথে এতোটা ভালো ব্যবহার করা, ডেকে নিয়ে চা খাওয়ানো, এটা তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো তা বুঝতাম। আমি তাকে ভরসা দিতাম, বলতাম, বন্ধুত্বে শ্রেণীভেদাভেদ থাকতে নেই। এখন তার সেই ইতস্ততা নেই।
মিজান বিয়ে করেছে দশ বছর আগে। সন্তানসন্ততি নেই। এতো বছর পর এই প্রথম তাদের সংসারে একটা সন্তান আসতে যাচ্ছে। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে তার বউয়ের ডেলিভারির তারিখ। এই জন্য উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই মিজানের। গত কয়েকদিন ধরে ওর বউয়ের শরীরটা ভীষণ খারাপ। ঘনঘন ফোন আসছে বাড়ি থেকে। মিজান বাড়িতে যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠে। কিন্তু যেতে চাইলেই কি, ছুটি তো পেতে হবে আগে!
মিজানকে বললাম, 'ডেলিভারি সামনের মাসে। ছুটি তখনই নাও। এখন না-গেলেই মনে হয় ভালো হয়। তাছাড়া গত মাসের শুরুতেও ছুটি কাটিয়ে এসেছো, এখন যদি ছুটি পেয়েও যাও, তখন যদি আবার ছুটি না-পাও?' শুনে ছেলেমানুষের মতো মিজান বললো, 'বউয়ের অসুখ। আমি কি এহন ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ামু না। ওর হাত হাতে নিইয়া, ওর কপালে হাত রাইখা ওর পাশে বসমু না?'
এরপর আমার বলার কিছু থাকে না আর। অনেক তদ্বির করে গতকাল সে তিন দিনের ছুটি যোগাড় করে ফেললো। ছুটি পেয়েই ছুটে গেছে সে।
মিজানকে ফোন দেবো দেবো ভাবছি, দেখি, মিজানই ফোন দিলো আমাকে, বললো, 'বাড়িতে ঠিকঠাকমতো পৌঁছাইছি।' তারপর হেসে জানালো, তাকে দেখেই নাকি তার বউ অনেকখানি সুস্থ হয়ে গেছে।
আমিও হাসলাম। আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম। মাত্র তিন দিনের ছুটিতে গেছে সে। এই তিনদিন বউকে নিরবিচ্ছিন্ন সময় দিক সে।
অসুখ-বিসুখে মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্যের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। মিজানের বউও হয়েছিলো নিশ্চয়। মিজানকে কাছে পেয়ে তার সেই ব্যাকুলতা কমারই কথা।
মিজান তার বউয়ের পাশে বসে আছে, বউয়ের একটা হাত মিজানের হাতে, অন্য হাতে মিজান তার বউয়ের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি, দু'জনেরই হাসিহাসি মুখ--এই মুহূর্তে আমি এমনই একটি দৃশ্য কল্পনা করে নিচ্ছি আর মনে মনে বলছি, 'আহারে...!'
মিজানকে একটা ফোন করা দরকার। গতরাতে সে তার 'দেশের বাড়ি' নেত্রকোনা যেতে গাড়িতে উঠেছিলো, তখন ফোন দিয়েছিলো আমাকে। এরপর আর কথা হয়নি। এতোক্ষণে নিশ্চয় তার বাড়িতে পৌঁছে যাবার কথা। পৌঁছেছে কি!
মিজান একটা সরকারি অফিসের পিয়ন। আমারই সমবয়সী হবে। এখানে আছে বেশ কয়েক বছর ধরে। আমার সাথে পরিচয়টাও অনেকদিনের। সবসময় হাসিখুশি থাকে সে, সবচেয়ে বড় কথা সে বেশ সাহিত্যানুরাগী, নিয়মিতই বইটই পড়ে।। এই কারণেই মিজানকে ভালো লাগে আমার।
কখনো কখনো আমি মিজানকে ডেকে দোকানে গিয়ে চা-টা খাই। প্রথম প্রথম সে ইতস্তত করতো, একজন পিয়নের সাথে এতোটা ভালো ব্যবহার করা, ডেকে নিয়ে চা খাওয়ানো, এটা তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো তা বুঝতাম। আমি তাকে ভরসা দিতাম, বলতাম, বন্ধুত্বে শ্রেণীভেদাভেদ থাকতে নেই। এখন তার সেই ইতস্ততা নেই।
মিজান বিয়ে করেছে দশ বছর আগে। সন্তানসন্ততি নেই। এতো বছর পর এই প্রথম তাদের সংসারে একটা সন্তান আসতে যাচ্ছে। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে তার বউয়ের ডেলিভারির তারিখ। এই জন্য উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই মিজানের। গত কয়েকদিন ধরে ওর বউয়ের শরীরটা ভীষণ খারাপ। ঘনঘন ফোন আসছে বাড়ি থেকে। মিজান বাড়িতে যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠে। কিন্তু যেতে চাইলেই কি, ছুটি তো পেতে হবে আগে!
মিজানকে বললাম, 'ডেলিভারি সামনের মাসে। ছুটি তখনই নাও। এখন না-গেলেই মনে হয় ভালো হয়। তাছাড়া গত মাসের শুরুতেও ছুটি কাটিয়ে এসেছো, এখন যদি ছুটি পেয়েও যাও, তখন যদি আবার ছুটি না-পাও?' শুনে ছেলেমানুষের মতো মিজান বললো, 'বউয়ের অসুখ। আমি কি এহন ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ামু না। ওর হাত হাতে নিইয়া, ওর কপালে হাত রাইখা ওর পাশে বসমু না?'
এরপর আমার বলার কিছু থাকে না আর। অনেক তদ্বির করে গতকাল সে তিন দিনের ছুটি যোগাড় করে ফেললো। ছুটি পেয়েই ছুটে গেছে সে।
মিজানকে ফোন দেবো দেবো ভাবছি, দেখি, মিজানই ফোন দিলো আমাকে, বললো, 'বাড়িতে ঠিকঠাকমতো পৌঁছাইছি।' তারপর হেসে জানালো, তাকে দেখেই নাকি তার বউ অনেকখানি সুস্থ হয়ে গেছে।
আমিও হাসলাম। আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম। মাত্র তিন দিনের ছুটিতে গেছে সে। এই তিনদিন বউকে নিরবিচ্ছিন্ন সময় দিক সে।
অসুখ-বিসুখে মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্যের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। মিজানের বউও হয়েছিলো নিশ্চয়। মিজানকে কাছে পেয়ে তার সেই ব্যাকুলতা কমারই কথা।
মিজান তার বউয়ের পাশে বসে আছে, বউয়ের একটা হাত মিজানের হাতে, অন্য হাতে মিজান তার বউয়ের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি, দু'জনেরই হাসিহাসি মুখ--এই মুহূর্তে আমি এমনই একটি দৃশ্য কল্পনা করে নিচ্ছি আর মনে মনে বলছি, 'আহারে...!'
Comments
Post a Comment