ভালোবাসা যাকে খায়
শহিদুল ইসলাম আকাশ
দিয়াশলাই জ্বেলে সিগারেটটা ধরাতেই, একদিন এক রূপবতী নারী আমার হাত থেকে তা নিজের হাতে টেনে নিয়ে, জ্বলন্ত সিগারেটের দিকে চোখ রেখে, কবি হেলাল হাফিজকে উদ্ধৃত করে বলেছিলো, 'ভালোবাসা যাকে খায়, এইভাবে সবটুকু খায়।' তার দুই চোখ জুড়ে ছিলো গাঢ় বিষাদ।
তখন সদ্য তরুণ আমি, কলেজে পড়ি। কতোদিন আগের কথা! এখনো সিগারেট হাতে নিলে কথাটা মনে পড়ে প্রতিবার। সত্যিই তো, ভালোবাসা যাকে খায় এমনই করে সবটুকু খায়। ছাইটুকুও কর্পূরের মতো বাতাসে মিলায়, নিদারুণ অবহেলায়।
অনেক বড় বড় লেখকের আত্মজীবনীতে পড়েছি, সিগারেটের প্রতি তাঁদের আসক্তির কথা। কেউ বলেছেন সিগারেট ভালোবেসে ঠোঁট ছুঁয়ে না দিলে, কিছুই লিখতে পারেন না। কারো কারো মতে, সিগারেট হচ্ছে সেই অভিমানী প্রেমিকা, যাকে ঘনঘন চুমু দিতে হয়__নয়তো অভিমান ভাঙে না কিছুতেই।
আমার এক নারীবন্ধু, দেশের বিখ্যাত কবি, প্রতি বইমেলায় তাঁর বই থাকেই, পাঠকপ্রিয়তাও বলার মতো__সেই বন্ধুটিও এই সেদিন রাত দু'টোয় মেসেঞ্জারে এসে আমার কাছে জানতে চাইলো, 'ঘরে সিগারেটও নেই, এদিকে একটা লেখাও মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে, কিছুতেই লিখতে পারছি না। কী করা যায় বলো তো!' আমি ঠাট্টা করে বলেছি, তোমার স্বামীর কাছে আছে কিনা দেখে নাও। তার স্বামী যে ধূমপায়ী সেটা আমি জানি। সে বললো, 'তাকে বলি কী করে?'
শখের লেখক আমি, না লিখলেও কারো কিছু এসে যাবে না এমনই লেখক। লিখতে বসলে এই আমাকেও হাতের কাছে সিগারেট রাখতে হয়। লিখতে লিখতে হঠাৎ থমকে গেলে তখন সিগারেটই ভরসা। (আমার এমন 'হাস্যকর' যুক্তি আপনাদের মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই)। হাতের আঙুলের ভাঁজে সিগারেট জ্বলে, ঠোঁটে নিই, ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সাদা কাগজে কালো কালিতে গেঁথে নিই প্রাণের শব্দমালা। (ফ্রেন্ডলিস্টে আমার শ্রদ্ধাভাজন যাঁরা আছেন, আমার এই সরল স্বীকারোক্তির জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)।
বেশিরভাগ লেখা আমি রাতেই লিখি। লেখার সময় আমার স্ত্রী উঁকি দেয় একটু পরপর। আমার হাতে সিগারেট দেখে সে রেগেমেগে যায়, বলে, সিগারেটই এই সংসারে তার সতীন। সতীনের জ্বালায় সে অস্থির। ইদানীং আইন করে সংখ্যা নির্ধারণ করেছে সে, সারাদিনে তিনটার বেশি খাওয়া চলবে না কিছুতেই। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় যদিও, সেই আইন অমান্য করি প্রায়ই।
একজন লেখক যখন একটি লেখা লিখে শেষ করেন, সেই অনুভূতি বর্ণনাতীত। তখন তিনিই হয়ে উঠেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, একটি নতুন লেখার জন্য এই ক্ষতি খুব বড় একটা ক্ষতি বলে মনে হয় না তখন।
এই লেখাটাও যখন লিখছি, লিখতে লিখতে সিগারেটের ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছি। একেকটা সিগারেট নিঃশেষ হয় আর যথারীতি আমার মনে পড়ে অনেক অনেক বছর আগে বলা সেই রূপবতী তরুণীর কথা__'ভালোবাসা যাকে খায়, এইভাবে সবটুকু খায়।'
পুনশ্চ:
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর।
দিয়াশলাই জ্বেলে সিগারেটটা ধরাতেই, একদিন এক রূপবতী নারী আমার হাত থেকে তা নিজের হাতে টেনে নিয়ে, জ্বলন্ত সিগারেটের দিকে চোখ রেখে, কবি হেলাল হাফিজকে উদ্ধৃত করে বলেছিলো, 'ভালোবাসা যাকে খায়, এইভাবে সবটুকু খায়।' তার দুই চোখ জুড়ে ছিলো গাঢ় বিষাদ।
তখন সদ্য তরুণ আমি, কলেজে পড়ি। কতোদিন আগের কথা! এখনো সিগারেট হাতে নিলে কথাটা মনে পড়ে প্রতিবার। সত্যিই তো, ভালোবাসা যাকে খায় এমনই করে সবটুকু খায়। ছাইটুকুও কর্পূরের মতো বাতাসে মিলায়, নিদারুণ অবহেলায়।
অনেক বড় বড় লেখকের আত্মজীবনীতে পড়েছি, সিগারেটের প্রতি তাঁদের আসক্তির কথা। কেউ বলেছেন সিগারেট ভালোবেসে ঠোঁট ছুঁয়ে না দিলে, কিছুই লিখতে পারেন না। কারো কারো মতে, সিগারেট হচ্ছে সেই অভিমানী প্রেমিকা, যাকে ঘনঘন চুমু দিতে হয়__নয়তো অভিমান ভাঙে না কিছুতেই।
আমার এক নারীবন্ধু, দেশের বিখ্যাত কবি, প্রতি বইমেলায় তাঁর বই থাকেই, পাঠকপ্রিয়তাও বলার মতো__সেই বন্ধুটিও এই সেদিন রাত দু'টোয় মেসেঞ্জারে এসে আমার কাছে জানতে চাইলো, 'ঘরে সিগারেটও নেই, এদিকে একটা লেখাও মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে, কিছুতেই লিখতে পারছি না। কী করা যায় বলো তো!' আমি ঠাট্টা করে বলেছি, তোমার স্বামীর কাছে আছে কিনা দেখে নাও। তার স্বামী যে ধূমপায়ী সেটা আমি জানি। সে বললো, 'তাকে বলি কী করে?'
শখের লেখক আমি, না লিখলেও কারো কিছু এসে যাবে না এমনই লেখক। লিখতে বসলে এই আমাকেও হাতের কাছে সিগারেট রাখতে হয়। লিখতে লিখতে হঠাৎ থমকে গেলে তখন সিগারেটই ভরসা। (আমার এমন 'হাস্যকর' যুক্তি আপনাদের মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই)। হাতের আঙুলের ভাঁজে সিগারেট জ্বলে, ঠোঁটে নিই, ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সাদা কাগজে কালো কালিতে গেঁথে নিই প্রাণের শব্দমালা। (ফ্রেন্ডলিস্টে আমার শ্রদ্ধাভাজন যাঁরা আছেন, আমার এই সরল স্বীকারোক্তির জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)।
বেশিরভাগ লেখা আমি রাতেই লিখি। লেখার সময় আমার স্ত্রী উঁকি দেয় একটু পরপর। আমার হাতে সিগারেট দেখে সে রেগেমেগে যায়, বলে, সিগারেটই এই সংসারে তার সতীন। সতীনের জ্বালায় সে অস্থির। ইদানীং আইন করে সংখ্যা নির্ধারণ করেছে সে, সারাদিনে তিনটার বেশি খাওয়া চলবে না কিছুতেই। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় যদিও, সেই আইন অমান্য করি প্রায়ই।
একজন লেখক যখন একটি লেখা লিখে শেষ করেন, সেই অনুভূতি বর্ণনাতীত। তখন তিনিই হয়ে উঠেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, একটি নতুন লেখার জন্য এই ক্ষতি খুব বড় একটা ক্ষতি বলে মনে হয় না তখন।
এই লেখাটাও যখন লিখছি, লিখতে লিখতে সিগারেটের ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছি। একেকটা সিগারেট নিঃশেষ হয় আর যথারীতি আমার মনে পড়ে অনেক অনেক বছর আগে বলা সেই রূপবতী তরুণীর কথা__'ভালোবাসা যাকে খায়, এইভাবে সবটুকু খায়।'
পুনশ্চ:
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর।
Comments
Post a Comment