হক বিচার

শহিদুল ইসলাম আকাশ

   অল্প বয়সী ছেলে। বয়স আঠারো বা বিশের মতো হবে। পরনে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি, ঘিরঙা পায়জামা, মাথায় মাইজভাণ্ডারী টুপি। পরিচয় দিতে গিয়ে বললো, সে কোন একটা মাদ্রাসায় পড়ে। আমার কাছে এসেছে তার নিজের এক সমস্যা নিয়ে। জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ। এক প্রতিবেশি তার ভিটিবাড়ির কিছু অংশ জোরজবরদস্তি দখল করতে চাইছে। আমার কাছে পরামর্শ চায় সে।

চোখেমুখে রাগ তার, বললো, 'যে গায়ের জোরে আমার ভিটিবাড়ি দখল করতে চাইছে, সে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।' বললাম, 'জাহান্নাম কি তুমি দেখেছো?' সে বললো, 'না। দেখিনি। তবে বিশ্বাস করি, জাহান্নাম আছে।' প্রতিউত্তরে বললাম, 'একই বিশ্বাস আমারও আছে। কিন্তু কে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে আর কে বেহেশতের হুরদের নিয়ে আমোদে থাকবে, তার বিচার করার একজন আছে, এই বিচার তুমি করার কে?'

ছেলেটা চুপ হয়ে গেলে। একটু পর বললো, 'ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করবেন। আল্লাহপাক নিশ্চয় তাকে জাহান্নামে পুড়াবে।'

আমি তাকে তপশীলে খতিয়ান নাম্বার দাগ, চৌহদ্দি এবং তার প্রাপ্যাংশ উল্লেখ করে পরিষদের গ্রাম আদালতে আবেদন করার পরামর্শ দিলাম। আমার পরামর্শে সে খুশি হলো। বললো, 'আপনি হক বিচারটা করে দেবেন, এই আমার অনুরোধ।' আমি আশ্বস্ত করলাম তাকে।

ছেলেটা সন্তুষ্টি নিয়ে চলে গেলো। পরেরদিন ইউনিয়ন পরিষদে এসে আবেদন জমা দেবে বলে গেলো। যাবার আগে আরো একবার 'হক বিচারে'র অনুরোধ করলো। যথারীতি আমি তাকে সম্মতি জানালাম।

সাধারণ মানুষ তাঁদের রায়ের মাধ্যমে আমাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন বলে, মানুষের নানা সমস্যা বিচারের মাধ্যমে আমাদের নিষ্পত্তি করতে হয় ঠিক, কিন্তু আদতেই কি মানুষের বিচার অন্য কোনো মানুষ করতে হয়? কোনো আদালতও?

আমি মনে করি, না। যে নিজের বিচার নিজেই করতে পারে, তার বিচার করার জন্য পৃথিবীর অন্য কোনো আদালতের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই, সেই ক্ষমতা থাকার পরেও, নিজেকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে না। তাদের সেই শক্তি ও সাহস কোনোটাই নেই। এখানেই মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী হয়েও, শ্রেষ্ঠ নয়।

Comments