পাত্রীদেখা

শহিদুল ইসলাম আকাশ  

   আমার এক প্রবাসী বন্ধু দেশে এসেছে। দীর্ঘ সাত বছর পর ফেরা। বিয়ে করার উদ্দেশ্যে আসা। দেশে আসার আগে থেকেই তার স্বজনেরা পাত্রীর খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে, কিন্তু দেশে এসেছে চার মাস হয়ে গেলো, এখনো পর্যন্ত কোনো পাত্রী ঠিক করে উঠতে পারেনি। ছয় মাসের ছুটির মধ্যে, ছুটি বাকি আর মাত্র দুই মাস। ভীষণরকম উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে সে।

তাকে বললাম, 'পাত্রী দেখাটেখা হয়েছে নাকি কোথাও?'

সে বললো, 'দেখবো কী? খোঁজখবর নিই, পাত্রীপক্ষ কখনো রাজি হয়, তো কখনো হয় না। রাজি হলে আরেক বিপত্তি, পাত্রী দেখার আগে পাত্রীপক্ষ আগে ছেলেকেই দেখে নিতে চায়। তাদের সামনে সেজেগুজে আমাকে যেতে হয়, নানানরকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, লেখাপড়া ঠিক আছে কিনা, কখনোকখনো কাগজে লিখে প্রমাণও দিতে হয়। সেদিন তো এক পাত্রীর মামা জানতে চাইলেন, 'আপনি কী রান্না করতে পারেন?' এতেই শেষ না, যাওয়ার সময় বললেন, 'আপনি কি গান গাইতে পারেন? আমার ভাগ্নী আবার গান ভালোবাসে।' এই হলো অবস্থা।'

হাসতে হাসতে আমি জানতে চাইলাম, 'তো কী বললি তখন?' 

সে বললো, 'রাগে ইচ্ছে হলো একটা চড় দিয়ে দিই। অনেক কষ্টে রাগ গোপন করে বললাম, 'সুর আমার মনের মধ্যেই আছে, গলায় নেই।' ভারী জ্বালা তো!' শেষে বন্ধুর উৎকণ্ঠিত প্রশ্ন: 'দেশে সময় কি এতোই পাল্টে গেছে, দোস্ত?' 

বললাম, 'আজকাল ছেলেদের বিয়ে করা অত সোজা কথা না। একটা সময় বিয়ের আগে পাত্রীকে অনেকরকম পরীক্ষা দিতে হতো। চুল খুলে দেখা হতো দীঘল কিনা, খোঁড়া কিনা পরখ করে নিতে পাত্রীকে হেঁটে দেখাতে হতো, চোখের দিকে খুঁটিয়ে দেখতো চোখ 'ট্যারা' কিনা; নানান প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করা হতো পাত্রীর বুদ্ধিমত্তা জেনে নিতে। নারীর শরীর দেখে পুরুষের মনের মানুষ খোঁজার ঘৃণ্য চেষ্টা। কিন্তু আজকাল সেই কনসেপ্ট অনেকটাই পাল্টে গেছে।'

'তো এখন কী করা যায়?' বন্ধুর উৎসুক প্রশ্ন।

বললাম, 'যুগ যুগ ধরে পাত্রী দেখার নামে পাত্রের তরফ থেকে পাত্রীকে যে দুর্বিষহ অপমান করা হতো, সময় এসেছে হয়তো সে অপমান শোধের।'

এ কথায় আমার বন্ধুর বিস্ময়াভিভূত প্রশ্ন, 'এই অপমান শোধের বলি আমাকেই হতে হলো!'

Comments