সাঁতার

শহিদুল ইসলাম আকাশ

সেদিন ঢাকায় এক আত্মীয়ের সাথে রিকশায় বসে কোথায় জানি যাচ্ছিলাম। এ কথা সে কথার পর কথায় কথায় তিনি বললেন, তাঁর সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলেকে সাঁতার শিখতে দিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সুইমিংপুলে। মাসিক ১৫০০ টাকা হারে। ঢাকা শহরে গ্রামাঞ্চলের মতো তো পুকুর বা নদী নেই, তাই এইসব সুইমিংপুলই ভরসা। কিন্তু মাসখানেক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর হঠাৎই সাঁতার শেখা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। জানতে চাইলাম, বন্ধ করা হলো কেন?

তিনি বললেন, 'ওখানে এক শিশু সাঁতার শিখতে গিয়ে একদিন মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায়, পরে শুনলাম সেই শিশুটা মারা গেছে। ভয়ে ছেলেকে আর সাঁতার শিখতে পাঠাই না।'

বলেই, তিনি আমার মেয়েকে সাঁতার শিখাই কিনা জানতে চাইলেন। উত্তরে বললাম, না। এই বিষয়ে মেয়েরও আগ্রহ তেমন দেখি না। সাঁতারের কথা আসাতে আমি আমার স্মৃতির এলবাম খুলে বসলাম, বললাম, আমাদের সময়ে আমরা বিলের জমে থাকা জলে, পুকুরে, খালে ঝাঁপাঝাঁপি করতে করতে, ডুবতে ডুবতে কখন যে সাঁতার শিখে ফেলতাম, তা আমরা নিজেদেরও অজানা। এখন তো ঘরের ভেতরই বাথরুম, এখনকার ছেলেমেয়েরা আমাদের সে অনুভূতি বুঝার কথা না।

ছেলেকে পুরোপুরি সাঁতার শিখাতে না-পেরে, রিকশায় বসেও, আমার সে আত্মীয় ভীষণরকম টেনশন করছেন। এখন কীভাবে তাঁর ছেলেকে পুরোপুরি সাঁতার শিখানো যায়, এই ভাবনায় তিনি অস্থির। বললেন, 'সাঁতার শিখে রাখা, সব মানুষের জন্য জরুরি। জীবনে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।'

বললাম, এতো অস্থির হচ্ছেন কেন? তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলতে হলো, জলের মধ্যে সাঁতার শেখাটা খুব একটা বড় কথা না__তা সে সুইমিংপুলই হোক কি পুকুর বা নদী অথবা গহীন সমুদ্র__তারও চেয়ে অনেক অনেক বেশি গুরুত্ববহ জীবনে সাঁতার কাটা। প্রত্যেক মুহূর্তে যে সাঁতার কেটে কেটে প্রতিটা মানুষকে এগোতে হয়। আপনার ছেলেকে সেই সাঁতার শিখাতে পারাটাই বড় কথা।

বললাম বটে কিন্তু মনে মনে একটা আক্ষেপও উজ্জ্বল হলো যেন__বিলের জলে, পুকুরে, খালে ঝাঁপাঁঝাঁপি করতে করতে, ডুবতে ডুবতে সাঁতার শেখা আমি__আমিও কি পুরোপুরি শিখতে পেরেছি জীবনে সাঁতার কাটা? মনে তো হয় না।

এ বড় কঠিন সাঁতার, এই জীবনের সাঁতার।   

Comments