মেকী

শহিদুল ইসলাম আকাশ 

আমার পরিচিত একজন এক অনলাইন-শপে জুতো দেখছিলেন। জুতোর ছবি দেখতে দেখতে বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলেন__কোনটা বাদ দিয়ে ঠিক কোনটা কেনা যায়! এতো চমৎকার চমৎকার ছবি জোড়া জোড়া জুতোর! সবগুলোতেই দৃষ্টি আটকে যাচ্ছিলো। বললেন, এখান থেকে অন্তত এক জোড়া জুতো হলেও অর্ডার করতেই হয়।

করলেনও। তিন দিন বাদে কুরিয়ারে জুতো জোড়া পেয়েও গেলেন। মূল্য পরিশোধ করে বুঝে নিলেন। প্যাকেট খুলে বের করার পর, ছবির মতো ঝকঝকে না হলেও, দেখে খুব একটা মন্দও লাগলো না তাঁর।

কিন্তু পায়ে পরতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ে গেলেন। জুতোর গায়ে সাইজ লেখা থাকলেও, তাঁর একই সাইজের পায়ে লাগছিলো না। একটার সাথে অন্যটার সাইজের সাযুজ্যও নেই। পরিশ্রমের টাকা দিয়ে কেনা বলে কষ্ট হলেও জুতো জোড়া পরার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি__ফেরত দেওয়ারও কোনো উপায় নেই যেহেতু।

নানা কসরতে পরতে গিয়েও বিপত্তি__দু'দিন পরার পরই নতুন অবস্থার ঔজ্জ্বল্য আর রইলো না জুতোগুলোর, ক্রমশ ম্লান হতে হতে দু'দিনেই পুরোনো হয়ে গেলো যেন। সপ্তাহের মাথাতেই জুতো জোড়া ছিঁড়েও গেলো।

এই আমিও একবার অন্য এক অনলাইন-শপ থেকে একটা বই অর্ডার করেছিলাম। যখন হাতে পেলাম, দেখি, মলাটের মুগ্ধতা যথার্থই আছে যদিও, কিন্তু পাতা উল্টে পড়তে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ__সাতের পরে আট না হয়ে সতেরো পৃষ্টা, ঝাপসা প্রিন্ট, কোনো কোনো পাতার অর্ধেক জুড়ে শুধুই কালির আঁচড়, অক্ষরবিন্যাস কিছুই নেই। মেজাজ তিন তিরিক্কি হওয়ার যোগাঢ়। কিছু করারও ছিলো না।

অনলাইনে আজকাল যে পাওয়া যায় না, এমন কিছুই নেই। যখন যেটা প্রয়োজন সার্চ দিলেই চোখের সামনে। খাতা, পেন্সিল, কলম, বই থেকে শুরু করে পোশাকআশাক, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সবকিছুই। এমনকি নারী-পুরুষের প্রেমও অনলাইনে বেশ সহজলভ্য এই যুগে।

আসল বই ভেবে আমি পাইরেট বই পাওয়ার মতো কিংবা আমার পরিচিতের এক সপ্তাহেই ছিঁড়ে যাওয়া জুতো জোড়ার মতো সেই প্রেমও দেখতে জমকালো বটে, কিন্তু তারও গভীরতা থাকে না। সেই প্রেমও বড্ড মেকী।

Comments