রূপালী গিটার
শহিদুল ইসলাম আকাশ
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গল্প পড়েছিলাম। নাম 'অতসীমামি'। গল্পে সুরেশ নামের একুশ বছরের এক যুবকের মামার বন্ধুর নাম যতীন--যতীন্দ্রনাথ রায়। যে যতীন ভালো বাঁশি বাজাতে পারেন। যতীনের সেই মোহন বাঁশির সুর শোনার জন্য সন্ধ্যে ঘনালে অনেকেই তাঁর ঢেরায় এসে হাজির হয়, প্রতিদিনই।
আইয়ুব বাচ্চু
যতীন যে বাঁশিটা বাজিয়ে পরমানন্দ পান, সেই বাঁশিটা বাজাতে গেলে গলা থেকে রক্ত বের হয় অনবরত। রক্ত বের হতে হতে যতীনের শরীরটা ক্ষয় হয়ে যায়, তবু যতীন বাঁশি বাজানো ছাড়েন না। যতীন বাঁশি বাজিয়ে সুখ পান, সেই সুখের জন্য তাঁকে এমনই দাম দিয়ে যেতে হয় যে, তাঁর গলা দিয়ে রক্ত বের হয়, যেন আত্মাহত্যা করছেন। সুরেশের 'মামা' যতীনের স্ত্রী অতসী আক্ষেপ করে বলেন, 'রোজ গলা দিয়ে রক্ত পড়লে মানুষ আর ক'দিন বাঁচে?' 'অতসীমামি' কতো বলেন, কতো কাঁদেন, যতীন কিছুতেই শোনেন না তবু। পৃথিবীর কোনো বাধাই যতীনের বাঁশি বাজানো বন্ধ করবার নয়। জবাবে যতীন বলেন, 'বাঁশি বাজাবো না? কী বলো...? তাহলে বাঁচবো কী করে?' শিল্পের জন্য কতো কতো দাম যে দিতে হয় একেকজন শিল্পীকে!
'অতসীমামি' গল্পের বংশীবাদক যতীনের মতো, গানের জন্য গায়ক আইয়ুব বাচ্চুর কখনো গলায় রক্ত ঝরেছে কিনা জানা নেই--কিন্তু তাঁর জন্য তাঁরই অগণিত ভক্তবৃন্দের হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ, তা দেখার অথবা দেখাবার সাধ্য কারো না-থাকলেও, অস্বীকার করার কোনো উপায় কি আছে?
কতোদিন কতোরাত ক্লান্তিবিহীন গান শুনিয়ে গেছেন তিনি আমাদের, তিনি না-থাকলেও তাঁর সেই অবিনাশী গান আমরা শুনে যাবো যতোদিন বেঁচে থাকি। এখানেই শিল্পের অনন্য জয়, শিল্পীর দেহান্তর হলেও, তাঁর সৃষ্ট শিল্পের মৃত্যু হয় না কিছুতে। শিল্প ও শিল্পী এই জগতে দুই-ই অবিনশ্বর।
এই পৃথিবীতে বারেবারে তারা ভরা রাত ফিরে আসবে, সেই সব রাতে আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনতে শুনতে এই মন ফেরারি হয়ে উঠলে, বুঝে নেবো, বুঝাতে আসলে আমরা কেউই পারি না--আমাদের মনের কথা; কখনো, কাউকেই।
আইয়ুব বাচ্চুর গেয়ে যাওয়া গান যতোদিন থাকবে, ততোদিন পাখির মতো ভালোবাসা ঠোঁটে করে ফিরে ফিরে আসবেন তিনি। ফিরে আসবেন তাঁর প্রিয় রূপালী গীটার হাতে।
ছেড়ে চলে যেতে হলেও, প্রিয় রূপালী গীটার কখনো ছাড়বে না আইয়ুব বাচ্চুকে। অবুঝ প্রেমিকার মতো তাঁর রূপালী গীটারটাও যে বড্ড বেশি অভিমানী!
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গল্প পড়েছিলাম। নাম 'অতসীমামি'। গল্পে সুরেশ নামের একুশ বছরের এক যুবকের মামার বন্ধুর নাম যতীন--যতীন্দ্রনাথ রায়। যে যতীন ভালো বাঁশি বাজাতে পারেন। যতীনের সেই মোহন বাঁশির সুর শোনার জন্য সন্ধ্যে ঘনালে অনেকেই তাঁর ঢেরায় এসে হাজির হয়, প্রতিদিনই।
যতীন যে বাঁশিটা বাজিয়ে পরমানন্দ পান, সেই বাঁশিটা বাজাতে গেলে গলা থেকে রক্ত বের হয় অনবরত। রক্ত বের হতে হতে যতীনের শরীরটা ক্ষয় হয়ে যায়, তবু যতীন বাঁশি বাজানো ছাড়েন না। যতীন বাঁশি বাজিয়ে সুখ পান, সেই সুখের জন্য তাঁকে এমনই দাম দিয়ে যেতে হয় যে, তাঁর গলা দিয়ে রক্ত বের হয়, যেন আত্মাহত্যা করছেন। সুরেশের 'মামা' যতীনের স্ত্রী অতসী আক্ষেপ করে বলেন, 'রোজ গলা দিয়ে রক্ত পড়লে মানুষ আর ক'দিন বাঁচে?' 'অতসীমামি' কতো বলেন, কতো কাঁদেন, যতীন কিছুতেই শোনেন না তবু। পৃথিবীর কোনো বাধাই যতীনের বাঁশি বাজানো বন্ধ করবার নয়। জবাবে যতীন বলেন, 'বাঁশি বাজাবো না? কী বলো...? তাহলে বাঁচবো কী করে?' শিল্পের জন্য কতো কতো দাম যে দিতে হয় একেকজন শিল্পীকে!
'অতসীমামি' গল্পের বংশীবাদক যতীনের মতো, গানের জন্য গায়ক আইয়ুব বাচ্চুর কখনো গলায় রক্ত ঝরেছে কিনা জানা নেই--কিন্তু তাঁর জন্য তাঁরই অগণিত ভক্তবৃন্দের হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ, তা দেখার অথবা দেখাবার সাধ্য কারো না-থাকলেও, অস্বীকার করার কোনো উপায় কি আছে?
কতোদিন কতোরাত ক্লান্তিবিহীন গান শুনিয়ে গেছেন তিনি আমাদের, তিনি না-থাকলেও তাঁর সেই অবিনাশী গান আমরা শুনে যাবো যতোদিন বেঁচে থাকি। এখানেই শিল্পের অনন্য জয়, শিল্পীর দেহান্তর হলেও, তাঁর সৃষ্ট শিল্পের মৃত্যু হয় না কিছুতে। শিল্প ও শিল্পী এই জগতে দুই-ই অবিনশ্বর।
এই পৃথিবীতে বারেবারে তারা ভরা রাত ফিরে আসবে, সেই সব রাতে আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনতে শুনতে এই মন ফেরারি হয়ে উঠলে, বুঝে নেবো, বুঝাতে আসলে আমরা কেউই পারি না--আমাদের মনের কথা; কখনো, কাউকেই।
আইয়ুব বাচ্চুর গেয়ে যাওয়া গান যতোদিন থাকবে, ততোদিন পাখির মতো ভালোবাসা ঠোঁটে করে ফিরে ফিরে আসবেন তিনি। ফিরে আসবেন তাঁর প্রিয় রূপালী গীটার হাতে।
ছেড়ে চলে যেতে হলেও, প্রিয় রূপালী গীটার কখনো ছাড়বে না আইয়ুব বাচ্চুকে। অবুঝ প্রেমিকার মতো তাঁর রূপালী গীটারটাও যে বড্ড বেশি অভিমানী!
Comments
Post a Comment