স্মৃতি এবং অনুভূতি

শহিদুল ইসলাম আকাশ

মোবাইল এমন সহজলভ্য হওয়ার আগে, প্রতিটা ঘরেই ছোট বড় নানাবৈচিত্রের ছবির এলবাম থাকতো। নিজের বাসার এবং কারো বাসায় বেড়াতে গেলে সেই পরিবারের ছবির এলবামের পাতা উল্টিয়ে ছবি দেখা হতো একান্ত মুহূর্তে।

এই যুগে নিজের একান্ত বলে কোনো সময় নেই, ছবির এলবাম তো প্রায় নেই বললেই চলে। ছবি তুলা এবং একই সাথে সংরক্ষণের জন্য এখন এক মোবাইলসেটই ভরসা।

পুরোনোদিনের এমন কিছু ছবির এলবাম এখনো আমার আছে। আছে কিন্তু কখনো বের করে তা দেখা হয় না। একটু আগে পুরোনো একটা জরুরি কাগজ খুঁজতে গিয়ে এই এলবামগুলো নজরে এলো। আট দশটার মতো এলবাম হবে ওখানে আছে। সেখান থেকে একটা এলবাম হাতে নিলাম। খুলতে গিয়ে দেখি, দীর্ঘদিন হাতের ছোঁয়া বঞ্চনায় এলবামটার এক পাতার সাথে অন্য পাতা লেগে আছে আটার মতো। 

ছবিগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে প্রায়। কোনোটার ঈষৎ তো কোনোটার অর্ধেক আবার কিছু ছবির পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। দুয়েকটা ছবি অবশ্য মোটামুটি ভালো আছে। তেমন একটা ছবি অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম। দেখতে দেখতে নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসলো আমাকে।

এগারো কি বারো বছর আগের ছবি। সেবার কক্সবাজারে বেড়াতে গেলে অনেক ছবি তুলি আমি। তারই একটা এই ছবি।

ছবিতে সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আমার পায়ের কাছে এসে আছড়ে পড়েছে দূর থেকে ছুটে আসা উদাসী ঢেউ। আমার ঠিক পেছনেই আমারই মতো কক্সবাজারে বেড়াতে-আসা নীল শাড়ি পরা এক অপরিচিত তরুণী। অপূর্ব রূপবতী নারী। সমুদ্রের প্রবল হাওয়ায় মেয়েটার শাড়ি বিস্রস্ত, তা সামলাতে খুব বিব্রত হয়ে পড়েছে সে। ছবিতে তা স্পষ্ট। দেখতে বেশ লাগে। মনে পড়ে গেলো, এই নাম না জানা মেয়েটাকে নিয়ে সেই সময় আমি একটা কবিতা লিখেছিলাম। 'সবার চোখ অস্তগামী সূর্যের দিকে, কিন্তু সূর্যটা দেখছে তোমাকে; শুধুই তোমাকে', এমনই একটি পঙক্তি ছিলো সেই কবিতায়। 

ছবিটা দেখে সেই স্মৃতি মনে করে মনে মনে হাসলামও। এই মেয়েটা কি কোনোদিনই জানবে, কোথাকার কোন এক অখ্যাত কবি তাকে নিয়ে একদিন কবিতা লিখেছিলো! এতোগুলো বছর পেরিয়ে এসে আবারও সেই কবিকে ছুঁয়ে দিয়েছে সে!

লোহা গরম থাকতে থাকতেই পিটিয়ে যা করার করে নিতে হয়। তাই তো ছবিটা দেখতে দেখতে মনের অনুভূতিমালা, নরম ভাবনাগুলো লিখে ফেলতে হলো। 

স্মৃতি পুরোনো হয়, অনুভূতি কখনোই নয়।   

Comments