মনের খাদ্য
শহিদুল ইসলাম আকাশ
পাঁচ বছর আগে একবার জামাল সাহেবের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাঁর বাড়ির পাশের এক স্কুলে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পুরষ্কারের অনুষ্ঠান ছিলো, অতিথিদের জন্য দুপুরের খাবারদাবারের ব্যবস্থা জামাল সাহেবই করেছিলেন।
অতি ধনী ব্যক্তি থেকে আমি শত হাত দূরে থাকি। কিন্তু জামাল সাহেবের ব্যাপারটা আলাদা, স্কুলের অনুষ্ঠান, সেখানে অন্য অতিথিদের সাথে আমি না-গেলে অসৌজন্যতা হওয়াই স্বাভাবিক। তাই যেতে হলো।
প্রায় দুই একরের ভিটিতে প্রাসাদোপম বাড়ি জামাল সাহেবের। সামনে ও পিছনে দীঘির মতো বিশাল দু'টি পুকুর। চারপাশে অসংখ্য গাছ, সবই ফলমূলের। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু আমড়া থেকে আমলকি--কোন ফলের গাছটা নেই, তার হিসেব করতে রীতিমত কাগজকলম নিয়ে বসার মতো ব্যাপার!
খাওয়াদাওয়া শেষে জামাল সাহেব আমরা অতিথিদের সবাইকে তাঁর বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখাতে লাগলেন। বিশেষত গাছগুলোই। কোন ফলের গাছ ভিয়েতনামী, কোনটা মালয়েশিয়ান আর কোন কোনটা শ্রীলংকান, নেপালি তার বিশেষ বিবরণ দিয়ে যেতে লাগলেন। অন্য অতিথিরা সবাই জামাল সাহেবকে বাহবা দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, 'আপনার রুচির তারিফ করতে হয় ভাই।' কিন্তু কী মনে করে আমি হঠাৎ জামাল সাহেবকে বলে বসলাম, 'আপনার বাড়ির চারপাশে এতো এতো গাছ, সবই ফলমূলের, কিন্তু কোথাও একটা ফুলের গাছ দেখলাম না। ফুলের গাছ নেই কেন?'
আমার কথায় জামাল সাহেব অবাক চোখে আমার দিকে তাকালেন, বললেন, 'ফুলের গাছ! ফুল দিয়ে কী হবে! ফুল কি খাওয়া যায় নাকি!' হেসে বললাম, 'জ্বি খাওয়া যায়। ফুল হলো মনের খাদ্য।' তাই শুনে জামাল সাহেব হাহাহাহা করে হেসে উঠলেন। সাথে অন্য অতিথিরাও।
পাঁচ বছর পর আজ আরেকবার জামাল সাহেবের বাড়িতে গেলাম। কোনো উপলক্ষ ছিলো না, দুপুরে জামাল সাহেবের বাড়ির ঠিক পাশে একটা দাওয়াত ছিলো। দাওয়াত খেয়ে একবার জামাল সাহেবের বাড়িতে ঢুঁ দিলাম। বাড়ির গেট খোলাই ছিলো। ভেতরে ঢুকতে গিয়ে অবাক হতে হলো, বাড়ির সামনে বিরাট জায়গা জুড়ে নানাজাতের অসংখ্য ফুলের গাছ। ফুলে ফুলে, সুগন্ধে কেমন এক অদ্ভুত মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে পুরো বাড়িটিতে।
জামাল সাহেব বাড়িতেই আছেন। বাড়ির উঠোনে চেয়ারে বসে তিনি ফুলের বাগানের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমাকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি, 'আরে আপনি! আসেন আসেন।' আমি এগিয়ে গিয়ে তার পাশে রাখা অন্য একটা চেয়ারে বসলাম। বসলেন তিনিও।
ফুলের বাগানের দিকে চোখ রেখে তিনি বললেন, 'আপনি দারুণ একটা কথা বলেছিলেন সেবার, ফুলের কথা। মন্দ বলেননি, বেঁচে থাকার জন্য শরীর ও মনের দুয়েরই খাদ্য দরকার। ফুল সত্যিই মনের জন্য অসাধারণ এক খাদ্য। এই ফুলের বাগানটা তাই করতেই হলো।'
জামাল সাহেবের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমিও এবার বাগানের ফুলগুলোর দিকে তাকালাম। দেখি, ফুটে থাকা লালরঙা গোলাপ ফুলগুলোর উপর নানাবর্ণের অনেকগুলো প্রজাপতি উড়ে এসে বসেছে। ক্ষণপরেই স্থান পরিবর্তন করে প্রজাপতিগুলো আবার জুঁই ফুলের উপর গিয়ে বসলো। দারুন মোহন তাদের এই উড়াউড়ি! চোখ যেন সরতেই চাইছে না।
আমি বাগান থেকে চোখ সরিয়ে আবার জামাল সাহেবের দিকে তাকালাম। তাঁকে দেখে মনে হলো, যেন কী যে সুখী একটা মানুষ! জামাল সাহেবের 'নীরোগ' মনটাই তাঁর চেহারাতে প্রতিফলিত হলো যেন। বুঝলাম, মানুষ তো শুধু শরীর নয়, তার গর্ব করার মতো আসল সম্পদ তো এই মনই। একটু চেষ্টা করলেই মনের নাগাল পাওয়ার 'দায়' থাকে না কিছুই।
পাঁচ বছর আগে একবার জামাল সাহেবের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাঁর বাড়ির পাশের এক স্কুলে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পুরষ্কারের অনুষ্ঠান ছিলো, অতিথিদের জন্য দুপুরের খাবারদাবারের ব্যবস্থা জামাল সাহেবই করেছিলেন।
অতি ধনী ব্যক্তি থেকে আমি শত হাত দূরে থাকি। কিন্তু জামাল সাহেবের ব্যাপারটা আলাদা, স্কুলের অনুষ্ঠান, সেখানে অন্য অতিথিদের সাথে আমি না-গেলে অসৌজন্যতা হওয়াই স্বাভাবিক। তাই যেতে হলো।
প্রায় দুই একরের ভিটিতে প্রাসাদোপম বাড়ি জামাল সাহেবের। সামনে ও পিছনে দীঘির মতো বিশাল দু'টি পুকুর। চারপাশে অসংখ্য গাছ, সবই ফলমূলের। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু আমড়া থেকে আমলকি--কোন ফলের গাছটা নেই, তার হিসেব করতে রীতিমত কাগজকলম নিয়ে বসার মতো ব্যাপার!
খাওয়াদাওয়া শেষে জামাল সাহেব আমরা অতিথিদের সবাইকে তাঁর বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখাতে লাগলেন। বিশেষত গাছগুলোই। কোন ফলের গাছ ভিয়েতনামী, কোনটা মালয়েশিয়ান আর কোন কোনটা শ্রীলংকান, নেপালি তার বিশেষ বিবরণ দিয়ে যেতে লাগলেন। অন্য অতিথিরা সবাই জামাল সাহেবকে বাহবা দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, 'আপনার রুচির তারিফ করতে হয় ভাই।' কিন্তু কী মনে করে আমি হঠাৎ জামাল সাহেবকে বলে বসলাম, 'আপনার বাড়ির চারপাশে এতো এতো গাছ, সবই ফলমূলের, কিন্তু কোথাও একটা ফুলের গাছ দেখলাম না। ফুলের গাছ নেই কেন?'
আমার কথায় জামাল সাহেব অবাক চোখে আমার দিকে তাকালেন, বললেন, 'ফুলের গাছ! ফুল দিয়ে কী হবে! ফুল কি খাওয়া যায় নাকি!' হেসে বললাম, 'জ্বি খাওয়া যায়। ফুল হলো মনের খাদ্য।' তাই শুনে জামাল সাহেব হাহাহাহা করে হেসে উঠলেন। সাথে অন্য অতিথিরাও।
পাঁচ বছর পর আজ আরেকবার জামাল সাহেবের বাড়িতে গেলাম। কোনো উপলক্ষ ছিলো না, দুপুরে জামাল সাহেবের বাড়ির ঠিক পাশে একটা দাওয়াত ছিলো। দাওয়াত খেয়ে একবার জামাল সাহেবের বাড়িতে ঢুঁ দিলাম। বাড়ির গেট খোলাই ছিলো। ভেতরে ঢুকতে গিয়ে অবাক হতে হলো, বাড়ির সামনে বিরাট জায়গা জুড়ে নানাজাতের অসংখ্য ফুলের গাছ। ফুলে ফুলে, সুগন্ধে কেমন এক অদ্ভুত মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে পুরো বাড়িটিতে।
জামাল সাহেব বাড়িতেই আছেন। বাড়ির উঠোনে চেয়ারে বসে তিনি ফুলের বাগানের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমাকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি, 'আরে আপনি! আসেন আসেন।' আমি এগিয়ে গিয়ে তার পাশে রাখা অন্য একটা চেয়ারে বসলাম। বসলেন তিনিও।
ফুলের বাগানের দিকে চোখ রেখে তিনি বললেন, 'আপনি দারুণ একটা কথা বলেছিলেন সেবার, ফুলের কথা। মন্দ বলেননি, বেঁচে থাকার জন্য শরীর ও মনের দুয়েরই খাদ্য দরকার। ফুল সত্যিই মনের জন্য অসাধারণ এক খাদ্য। এই ফুলের বাগানটা তাই করতেই হলো।'
জামাল সাহেবের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমিও এবার বাগানের ফুলগুলোর দিকে তাকালাম। দেখি, ফুটে থাকা লালরঙা গোলাপ ফুলগুলোর উপর নানাবর্ণের অনেকগুলো প্রজাপতি উড়ে এসে বসেছে। ক্ষণপরেই স্থান পরিবর্তন করে প্রজাপতিগুলো আবার জুঁই ফুলের উপর গিয়ে বসলো। দারুন মোহন তাদের এই উড়াউড়ি! চোখ যেন সরতেই চাইছে না।
আমি বাগান থেকে চোখ সরিয়ে আবার জামাল সাহেবের দিকে তাকালাম। তাঁকে দেখে মনে হলো, যেন কী যে সুখী একটা মানুষ! জামাল সাহেবের 'নীরোগ' মনটাই তাঁর চেহারাতে প্রতিফলিত হলো যেন। বুঝলাম, মানুষ তো শুধু শরীর নয়, তার গর্ব করার মতো আসল সম্পদ তো এই মনই। একটু চেষ্টা করলেই মনের নাগাল পাওয়ার 'দায়' থাকে না কিছুই।
Comments
Post a Comment