আবেগ ও ভালোবাসা

শহিদুল ইসলাম আকাশ 

 পথের মধ্যে গিফট প্যাপারে মোড়ানো কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখলাম। আমি বাসায় ফিরছিলাম, বাইক থামিয়ে সেটা কুড়িয়ে নিলাম। ভেতরে কী আছে কে জানে! রাস্তার পাশে এক দোকানদারকে প্যাকেটটা দিলাম, বললাম, 'এটা রাস্তায় পেয়েছি। অসাবধানে কারো কাছ থেকে পড়ে গেছে হয়তো। কেউ যদি খোঁজ করে, নিশ্চিত হয়ে দিয়ে দেবেন প্লিজ।' আমার কথা শুনে দোকানদার সন্দেহের চোখে তাকালেন, আধবুড়ো দোকানদার, বললেন, 'ভেতরে কী আছে?' বললাম, 'জানি না।' তাঁর সন্দেহ ঘনীভূত হলো, 'যদি এরমধ্যে খারাপ কিছু থাকে! আমি রাখবো না ভাই।' তিনি রাখতে অসম্মতি জানালেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানে, এর সন্ধানে আসে যদি কেউ!

ঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকে কাউকে খোঁজ নিতে আসতে না-দেখে দোকানদারকে বললাম, 'আপনার মতো সন্দেহ আমারও আছে, এতে কী আছে আসলে! আসুন খুলে দেখি...' বলেই গিফট প্যাপার খুলতে লাগলাম আমি।

খুলে দেখি, ভেতরে চমৎকার একটা খেলনার পুতুল--বাদামিরঙা দীঘল চুলের নারী। সুইচ টিপতেই পুতুলটাতে মিউজিক বেজে উঠলো।

আমি দোকানদারের দিকে খেলনাটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, 'প্যাকেট রহস্যের সমাধান তো হলো। এখন তো রাখা যায়।' তিনি আগের চেয়ে বেশি বিস্ময় নিয়ে বললেন, 'এটা নিয়ে আমি কী করবো? দেখেই মনে হচ্ছে, কমদামী খেলনা। কেউ এটা খুঁজতে আসবে বলে মনে হয় না।'

আমি হাসলাম, বললাম, 'খেলনাটা কমদামী হতে পারে কিন্তু এর পরতে পরতে কোনো এক শিশুর জন্য কোনো এক স্বজনের যে আবেগ ও ভালোবাসা জড়িয়ে আছে, এর দাম দুর্মূল্য।'

দোকানদারকে খেলনাটা দিয়ে আসলাম। দোকানদার শর্ত দিলেন, বললেন, কালকের মধ্যে কেউ যদি খেলনাটার খুঁজে না-আসে, তাহলে পরদিন আমাকে এসে তা নিয়ে যেতে হবে। শর্তে রাজি হলাম আমি।

এরপর বাইক নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে, মনে মনে বললাম, হয়তো কেউ একজন তাঁর প্রিয় সন্তানের জন্য খেলনাটা কিনেছিলেন। হয়তো সন্তানের জন্মদিন ছিলো কিংবা অন্য কোনো উপলক্ষ অথবা হয়তো কোনো উপলক্ষই না, সন্তান পুতুল নিয়ে খেলতে পছন্দ করে বলেই কেনা। বাসায় ফিরে খেলনাটার কথা মনে করে মানুষটার কি খুব মন খারাপ হবে না?

ভাবলাম, হয়তো তিনি হারিয়ে যাওয়া খেলনাটা আর না-খুঁজে তখনই বাসা থেকে বের হয়ে একইরকম আরেকটা খেলনা নিয়ে আসবেন সন্তানের জন্য। কিন্তু প্রথমবার কেনার সময় যে গভীর আবেগ ও ভালোবাসা জড়িয়ে ছিলো, সেই একই আবেগ ও ভালোবাসা কি আর থাকবে তাতে?

Comments