মন্ত্র

শহিদুল ইসলাম আকাশ

এক মধ্যবয়সী নারী সাপের খেলা দেখাচ্ছেন। চারপাশে মোটামুটি রকমের ভিড়। ভিড় ঠেলে আমি সামনে এগিয়ে গেলাম। কয়েক জাতের সাপ নিয়ে নানারকম খেলা দেখালেন তিনি। শেষে, তাঁর ভাষায় 'সবিশেষ আকর্ষণ, সাপ-বেজির প্রতিযোগিতাও দিলেন। শেষ পর্যন্ত বেজিটাই জিতে যায়। রোমাঞ্চকর প্রতিযোগিতা।

খেলা দেখানো শেষে একে একে সবাই চলে গেলো। যাওয়ার আগে অনেকেই খুশি হয়ে টুকটাক টাকাপয়সাও দিয়ে গেলো। পাশে তখনো দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। তিনি সাপগুলোকে বাক্সে ভরছেন, তাঁর বিভিন্ন সরঞ্জাম গুছোচ্ছেন। অদূরে দাঁড়িয়ে আমি তাঁর সাথে আলাপ জুড়ে দিলাম।

'সাপগুলোর কি বিষ আছে?' আমার এমন প্রশ্নে তিনি কঠিন চোখে আমার দিকে তাকালেন। কী মনে করে হঠাৎ আবার হেসেও দিলেন, বললেন, 'না। তয় আগে বিষ ছিলো। যহন ধরা হইছিলো। খেলা দেখনের সাপে বিষ রাখতে নাই, কহন কোন মাইনষের ক্ষতি কইরা বহে তার কি ঠিক আছে!'

'কে ধরেছেন এইসব? আপনি?' উত্তর দিতে গিয়ে তিনি জানালেন, তাঁর 'পুলার বাবা'ই বনবাদাড়ে ঘুরে ঘুরে এসব সাপ ধরে আনেন। পরে সেই সব সাপ থেকে বিষ বের করে নেন। এমন অনেক সাপ ভাড়াতেও দেন তিনি, বেদেদের__নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে যাঁরা এমনই সাপের খেলা দেখান।

'কোন কোন সাপ ধরতে পারেন তিনি?' জানতে চাইলাম। তিনি জবাব দিলেন না, তাঁর সরঞ্জাম গুছানোর কাজে মনোযোগী হলেন। আমি পুনরায় একই প্রশ্ন করলাম, একটু চুপ থেকে তাঁর উত্তর ছিলো, কোনো সাপকেই বশ মানানো কঠিন কিছু নয়, যদি মন্ত্র জানা থাকে।

আর কথা বাড়ালাম না। আমি পাশ ফিরে চলে আসছি আর মনে মনে ভাবছি, মন্ত্র জানা থাকলে সব সাপকেই বশ করা যায়, কিন্তু কোনো মন্ত্রেই শুধু মানুষকে বশ করা যায় না। এই জগতে একমাত্র মানুষই বড় জটিল প্রাণী।   

Comments