মিথ্যে অভিনয়
শহিদুল ইসলাম আকাশ
শেভ করছিলাম। এই দোকানে আমার পরিচিত একজন নাপিত ছিলো, বাদল নাম, তাকে দেখলাম না। বাদলেরই মতো যুববয়সী একজনকে দেখতে পেলাম, এই যুবককে আগে কখনো দেখিনি দোকানটাতে।
শেভ করতে করতে নতুন নাপিতটার কাছে বাদলের কথা জানতে চাইলাম, 'সে কোথায়? অসুখবিসুখ করেনি তো?'
যুবক বললো, 'সে তো গত সপ্তাহে এই দোকান আমার কাছে বেচে দিয়েছে।' প্রতিউত্তরে বললাম, 'ওহ'।
এই দোকানটাতে গ্রাহক ভালোই আছে। সারাদিন, এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত চুলদাড়ি কাটতে আসা মানুষের লাইন লেগে থাকে। এমন একটা দোকান বাদল ছেলেটা হঠাৎ ছাড়লোই বা কেন কে জানে!
শেভিংক্রিমের ফেনা আমার সারা মুখে। এরমধ্যেই আবার জিজ্ঞেস করলাম, 'কেন, সে দোকান বিক্রি করলো কেন হঠাৎ? কোনো সমস্যা ছিলো--এই ধরো ঋনটিনের ঝামেলা?'
যুবক আমার মুখে ক্ষুর টানতে টানতে বললো, 'আমার জানামতে এমন কিছুই আছিলো না। কোনো অভাবও নাই। তবু কেন দোকান বেচতে গেলো, তা তার নিজের বিবেচনা।'
আমি আর কথা বাড়ালাম না। শেভ করা শেষে টাকা পরিশোধ করে চলে এলাম।
পরবর্তীতেও, এই একই দোকানে চুল কাটা শেভ করার কাজ সারি। এরপর আর একবারও বাদলের কথা জানতে চাইনি।
সামান্য এক নাপিত, যার কাছে মাঝেমধ্যে গিয়ে চুল কাটি শেভ করি, সেই নাপিত দোকান ছেড়ে চলে গেছে, এতে বিচলিত হবার মতো কিছু নেই। হইওনি। বাদলকে মনে রাখারও কোনো কারণ নেই। তাকে বেমালুম ভুলেও গেলাম।
কিন্তু অনেকদিন পর, এই সেদিন হঠাৎ বাদলের সাথে দেখা হয়ে গেলো। দেখা হতেই আবার মনে পড়লো। সে এখন পেশা বদল করেছে, সিএনজি অটোরিকশা চালায়। এক জায়গায় যাচ্ছিলাম, স্টেশন থেকে সিএনজি অটোরিকশা খুঁজতে গিয়ে চালকের আসনে তাকে দেখতে পেলাম। কিছুটা অবাক হলাম বৈকি। এতো ভালো উপার্জনের ব্যবসা ফেলে, সে সিএনজি অটোরিকশার চালক হতে গেলো কোন দুঃখে?
সেই প্রশ্ন করলামও তাকে। সহাস্যে সে বললো, 'আগের কাজটা ভালো লাগছিলো না আর। তাই ছেড়ে দিয়েছি। ভালো না-লাগলে সেই কাজ করার কোনো অর্থ নাই।'
'ভালো লাগেনি বলে এমন ভালো উপার্জনের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিতে হবে!' আমার বিস্ময়।
বাদল পকেট থেকে মোবাইল বের কী জানি দেখলো। মোবাইলটা আবার পকেটে রেখে, আমার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। বললো, 'ভালো লাগেনি বলে কতো রাজামহারাজা তাদের সিংহাসন ছেড়ে দিয়েছে--আমি তো কোন এক ছার নাপিত।'
আমি জানি না ড্রাইভিং পেশাও বাদলের ক'দিন ভালো লাগে। ভালো না-লাগলে এই পেশাও সে হুট করে একদিন ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো পেশা খুঁজে নেবে হয়তো। এক্ষেত্রে সে অবশ্যই কি সাহসী না? নয় কেন? মনে মনে সাধুবাদও দিলাম তাকে।
ভালো লাগে না, তবু সারাজীবন মিথ্যে মিথ্যে ভালো লাগার অভিনয় করার মতো নিচতা, পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কিছু নেই। এই বৃত্ত সবাই ভাঙতে পারে না। বাদলের মতো হাতেগুনা ক'জনকে ব্যতিক্রম দেখতে পাই শুধু।
মাঝেমধ্যে আমারও যে খুব বাদল হতে ইচ্ছে করে না, তা কে বলবে!
শেভ করছিলাম। এই দোকানে আমার পরিচিত একজন নাপিত ছিলো, বাদল নাম, তাকে দেখলাম না। বাদলেরই মতো যুববয়সী একজনকে দেখতে পেলাম, এই যুবককে আগে কখনো দেখিনি দোকানটাতে।
শেভ করতে করতে নতুন নাপিতটার কাছে বাদলের কথা জানতে চাইলাম, 'সে কোথায়? অসুখবিসুখ করেনি তো?'
যুবক বললো, 'সে তো গত সপ্তাহে এই দোকান আমার কাছে বেচে দিয়েছে।' প্রতিউত্তরে বললাম, 'ওহ'।
এই দোকানটাতে গ্রাহক ভালোই আছে। সারাদিন, এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত চুলদাড়ি কাটতে আসা মানুষের লাইন লেগে থাকে। এমন একটা দোকান বাদল ছেলেটা হঠাৎ ছাড়লোই বা কেন কে জানে!
শেভিংক্রিমের ফেনা আমার সারা মুখে। এরমধ্যেই আবার জিজ্ঞেস করলাম, 'কেন, সে দোকান বিক্রি করলো কেন হঠাৎ? কোনো সমস্যা ছিলো--এই ধরো ঋনটিনের ঝামেলা?'
যুবক আমার মুখে ক্ষুর টানতে টানতে বললো, 'আমার জানামতে এমন কিছুই আছিলো না। কোনো অভাবও নাই। তবু কেন দোকান বেচতে গেলো, তা তার নিজের বিবেচনা।'
আমি আর কথা বাড়ালাম না। শেভ করা শেষে টাকা পরিশোধ করে চলে এলাম।
পরবর্তীতেও, এই একই দোকানে চুল কাটা শেভ করার কাজ সারি। এরপর আর একবারও বাদলের কথা জানতে চাইনি।
সামান্য এক নাপিত, যার কাছে মাঝেমধ্যে গিয়ে চুল কাটি শেভ করি, সেই নাপিত দোকান ছেড়ে চলে গেছে, এতে বিচলিত হবার মতো কিছু নেই। হইওনি। বাদলকে মনে রাখারও কোনো কারণ নেই। তাকে বেমালুম ভুলেও গেলাম।
কিন্তু অনেকদিন পর, এই সেদিন হঠাৎ বাদলের সাথে দেখা হয়ে গেলো। দেখা হতেই আবার মনে পড়লো। সে এখন পেশা বদল করেছে, সিএনজি অটোরিকশা চালায়। এক জায়গায় যাচ্ছিলাম, স্টেশন থেকে সিএনজি অটোরিকশা খুঁজতে গিয়ে চালকের আসনে তাকে দেখতে পেলাম। কিছুটা অবাক হলাম বৈকি। এতো ভালো উপার্জনের ব্যবসা ফেলে, সে সিএনজি অটোরিকশার চালক হতে গেলো কোন দুঃখে?
সেই প্রশ্ন করলামও তাকে। সহাস্যে সে বললো, 'আগের কাজটা ভালো লাগছিলো না আর। তাই ছেড়ে দিয়েছি। ভালো না-লাগলে সেই কাজ করার কোনো অর্থ নাই।'
'ভালো লাগেনি বলে এমন ভালো উপার্জনের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিতে হবে!' আমার বিস্ময়।
বাদল পকেট থেকে মোবাইল বের কী জানি দেখলো। মোবাইলটা আবার পকেটে রেখে, আমার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। বললো, 'ভালো লাগেনি বলে কতো রাজামহারাজা তাদের সিংহাসন ছেড়ে দিয়েছে--আমি তো কোন এক ছার নাপিত।'
আমি জানি না ড্রাইভিং পেশাও বাদলের ক'দিন ভালো লাগে। ভালো না-লাগলে এই পেশাও সে হুট করে একদিন ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো পেশা খুঁজে নেবে হয়তো। এক্ষেত্রে সে অবশ্যই কি সাহসী না? নয় কেন? মনে মনে সাধুবাদও দিলাম তাকে।
ভালো লাগে না, তবু সারাজীবন মিথ্যে মিথ্যে ভালো লাগার অভিনয় করার মতো নিচতা, পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কিছু নেই। এই বৃত্ত সবাই ভাঙতে পারে না। বাদলের মতো হাতেগুনা ক'জনকে ব্যতিক্রম দেখতে পাই শুধু।
মাঝেমধ্যে আমারও যে খুব বাদল হতে ইচ্ছে করে না, তা কে বলবে!


Comments
Post a Comment