মায়ার ঘাটে

শহিদুল ইসলাম আকাশ 

ছেলেকে নিয়ে বাইরে একটু হাঁটতে বেরিয়েছি। ছেলের বয়স চারের ঘরের পৌঁছেছে সবে। সময় পেলে মাঝেমধ্যে তাকে নিয়ে এমন একটু হাঁটাহাঁটি করি। কাছে বিনোদনের জায়গা নেই কোথাও, তাই আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করে যেটুক যা দেখিয়ে ছেলেকে বিনোদিত করা যায়।

কিছুদূর হেঁটে ছেলে আমার হাঁপিয়ে উঠলো, বললো, 'বাবা, কোলে নাও।' আমি ছেলেকে কোলে নিলাম। কোলে নিতে গিয়ে হঠাৎ ত্রিশ বছর পেছনে ফিরে গেলাম আমি। ছেলেবেলায় আমিও এমনি করে বাবার সাথে বাইরে কোথাও হাঁটতে গেলে, সামান্য হেঁটে কোলে নেওয়ার আবদার থাকতো আমারও। বাবা কোলে তুলে নিতেন।

তখন বাবার কোলে বসে আমি যা-ই দেখতাম আমার বিস্ময়ের অন্ত থাকতো না--বিলে গরুর বাছুর দেখে আমার বায়না থাকতো বাছুরটাকে আমি বাসায় নিয়ে যাবো, পাখি দেখলে সেই পাখি ধরে আমার হাতে দিতে হবে, ফুল দেখলে ফুলগুলো কুড়িয়ে দিতে হবে...বায়নার শেষ নেই।

ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটছি আর ত্রিশ বছর আগের সেই সব স্মৃতি হাতড়ে ফিরছি। একটা সময় ত্রিশ বছর পেরিয়ে বর্তমানে ফিরলাম আবার। হয়তো ঠিক বর্তমানেও নয়, ত্রিশ বছর পরের কথাই ভাবছি।

আজ থেকে ত্রিশ বছর পরে, আমার ছেলে যদি ততোদিন বেঁচেবর্তে থাকে, সংসারী হয়, তখন সে তার ছেলেকে কোলে নিয়ে এমনি করে হাঁটতে গিয়ে, আমার কথা মনে পড়বে তারও কি হঠাৎ! হয়তো।

তখন আমার ছেলেটা কি বুঝবে যে, কী অপরিসীম কাঙালপনা নিয়ে একদিন আমিও নোঙর ফেলেছিলাম, জীবন নামের এই ভীষণ মায়ার ঘাটে!   

Comments