নক্ষত্রবীথির দেশে
শহিদুল ইসলাম আকাশ
গায়ে হলুদের রাত। কনেপক্ষের দাওয়াতে এসেছি। দূর থেকে হলুদ শাড়িতে স্টেজে বসা কনে মেয়েটাকে দেখছি। এই সেদিনের মেয়েটা কখন যে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেলো! যেন চোখের পলকেই!
পুরোনো দিনে ফিরে গেলাম। এই মেয়ের বাবা-মার বিয়ে দেখেছি আমি, যদিও বয়স অল্পই--নয় কি দশ বছর বয়স তখন আমার। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, মেয়েটার বাবা শফি সাহেব পালকিতে করে বরযাত্রা করেছিলেন।
এখনো চোখে ভাসে, বিয়ের বছর সাতের মাথায় পরপর দু'টি ছেলেসন্তান হওয়ার পর এই মেয়ের জন্ম হয়েছিলো। মেয়ে পেয়ে তিনি যেন আকাশটাকে হাতের মুঠোয় পেলেন। মেয়েটা একটু বড় হলে কোলে করে বাইরে হাঁটতেন। একেওকে বলতেন, 'আমার মেয়েটা বড় হয়ে পরীর মতো হবে দেখো। একদিন কোনো রাজপুত্রের সাথেই তাকে বিয়ে দেবো আমি।'
মেয়ের যখন তিন বছর বয়স, তখন হঠাৎ শফি সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই অসুস্থতা বাড়তে লাগলো। এই ডাক্তার সেই ডাক্তার, এই টেস্ট সেই টেস্টের পরে ডাক্তার নিশ্চিত হলেন--এই রোগ দুরারোগ্য ক্যান্সার।
দেখতে দেখতে মানুষটার শরীর ভেঙে গেলো এবং এরপরও ছয় মাসের মতো অনেক কষ্ট পেয়ে মৃত্যুর কাছে হার মানতো হলো তাঁকে।
শফি সাহেব গত হয়েছেন সেই কবে! আজ তার মেয়েটার গায়ে হলুদ, পরেরদিনই বিয়ে। মেয়ের বর ছেলেটা দেখতে রাজপুত্রের মতো কিনা আমি জানি না। মনে মনে খুব করে চাই, শফি সাহেবের এই মেয়েটার বর রাজপুত্রের চেয়েও যেন বেশি কিছু হয়।
জীবনের ওপারে কী থাকে তা কেইবা জানে--মৃত্যুর পরে! বিয়েবাড়ি থেকে বের হয়ে খোলা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে একবার আকাশের দিকে তাকালাম। দেখি আকাশ জুড়ে অনন্ত নক্ষত্রবীথি। ভাবতে লাগলাম, এই বিশাল তারার বাগানের কোথাও বুঝি শফি সাহেব আছেন, এর কোনো একটি তারা নিশ্চয় তিনি।
দূর-আকাশ থেকে তিনি কি তার মেয়েকে তাকিয়ে দেখছেন এই মুহূর্তে--কী অবাক করা সুন্দর যে লাগছে মেয়েটাকে! সাক্ষাত পরীই তো!
আচ্ছা, মানুষের মতো তারারাও কি দুঃখের মতো সুখেও খুব করে কাঁদে--কখনো!


Comments
Post a Comment