জীবনের পরীক্ষা

শহিদুল ইসলাম আকাশ


২০ তারিখ থেকে মেয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সে। গত সপ্তাহে ঢাকায় ওর নানা মারা গেছেন। সেও আমার সাথে ঢাকায় ছিলো। পরীক্ষার আগের দিনই ওকে নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরলাম।

পরীক্ষার আগের রাতে মেয়ে বললো, ঢাকায় থাকাতে পরীক্ষার প্রস্তুতি তেমন একটা ভালো নেই ওর। পরীক্ষা ভালো দিতে পারার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। বললাম, যেটুকু পারো লিখবে। তবু পরীক্ষা দেওয়াই মঙ্গল। ভালো বা মন্দ একটা কিছু হলে হবে, পরীক্ষা দেওয়াটাই বড় কথা।

এরইমধ্যে ৩টা পরীক্ষা দিয়ে দিলো এবং আশংকা সত্ত্বেও পরীক্ষাগুলোতে অসম্ভবরকম ভালো করেছে সে। সে তো মহাখুশি।

পরের পরীক্ষাগুলোর জন্য খুব পরিশ্রম করছে মেয়েটা। অনেক রাত পর্যন্ত পড়ছে আবার খুব ভোরে উঠে বই নিয়ে বসে যাচ্ছে। দেখে বড় মায়া লাগে।

এখন মেয়ে আমার ঘুমাচ্ছে। বালিশের পাশে বই নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। আমি ঘুমন্ত মেয়ের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি আর ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছি, আমার মেয়েটা প্রাথমিক থেকে একদিন উচ্চবিদ্যালয়ে উঠবে, তারপর মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়__সেই সব দিনেও এমন কতো কতো পরীক্ষাই তো ওকে দিতে হবে। কিন্তু তারপর...

তারপরই তো ওর আসল পরীক্ষা, জীবনের পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় কোনো প্রবেশপত্র নেই, নির্ধারিত বিষয় নেই, নেই সারি সারি টুলবেঞ্চ বসানো কোনো নির্দিষ্ট হলরুম__তবু প্রতিটি মুহূর্তেই ওকে দিয়ে যেতে হবে সেই অমোঘ পরীক্ষা। যে পরীক্ষাকে এড়িয়ে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়; কোনোভাবেই না।

ভাবছি এও যে, জীবন নামের সেই কঠিন পরীক্ষায় আমার মেয়েটা উত্তীর্ণ হতে পারবে তো?

Comments