রাজকন্যার জন্য
শহিদুল ইসলাম আকাশ
বয়স বারো তেরোর বেশি হবে না। কিন্তু শাড়িতে মেয়েটাকে আঠারোর যুবতীর মতো দেখাচ্ছে। শাড়িতে চল্লিশোর্ধ মেয়েদের যেমন বয়স কমিয়ে দেয় অনেকখানি, তেমনি কিশোরী মেয়েদেরও বয়স বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ--তাদেরও যুবতী যুবতী মনে হয়।
মেয়েটা সোলতান সাহেবের মেয়ে। সকালবেলা আমি একটা কাজে সোলতান সাহেবের বাসায় এসেছি, সোলতান সাহেব প্রাতরাশ সারছেন। আমি ড্রয়িংরুমে ওনার জন্য অপেক্ষা করছি, তখনই মেয়েটা হঠাৎ আমার পায়ে ধরে সালাম করে ফেললো।
আমি মেয়েটাকে বললাম, 'কী নাম তোমার?' সে অন্য পাশে চেয়ারটাতে বসতে বসতে বললো, 'রিমি'। জানালো, ওর মা ওকে বলেছে, প্রথম শাড়ি পরলে মুরুব্বিদের পা ছুঁয়ে সালাম করতে হয়। আজ সে প্রথম শাড়ি পরেছে, তাই সবাইকে পা ছুঁয়ে সালাম করছে। শুনে হাসলাম। পুরোনো আমলের সংস্কৃতি এখনো এই বাড়িতে চলছে দেখি!
এরমধ্যে সোলতান সাহেব চলে এলেন। মেয়ে সোলতান সাহেবেরও পা ছুঁয়ে সালাম করলো। সোলাতান সাহেব তাঁর মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'গতকাল শাড়িটা ওর মার জন্য কিনেছিলাম। মেয়ের বায়না, সে শাড়িটা পরবে।' আমি বললাম, 'শাড়িতে বেশ তো লাগছে আপনার মেয়েকে।' সোলতান সাহেব হাসলেন, বললেন, 'ও আমার রাজকন্যা। যদিও ভাই আমি রাজামহারাজা কেউ নই।'
রিমি ঘরের ভেতর চলে গেলো। সোলতান সাহেব আর আমি আমাদের কাজের কথা নিয়ে আলাপ করতে লাগলাম। ঘন্টাখানেক আলাপের ফাঁকেফাঁকে দুই দফা চা-নাস্তাও এলো। এক ঘন্টা পর যখন যাবার জন্য উঠছিলাম, তখন রিমি আবার এলো। এখন আর পরনে শাড়ি নেই তার, হালকা গোলাপি রঙের একটা ফ্রক পরেছে সে। এখন আর তাকে যুবতী যুবতীও লাগছে না, অমল কিশোরীই লাগছে। আসার সময় বললাম, 'ভালো থেকো মা।'
রিমির চেয়ে বছর-দেড়েকের ছোট একটা মেয়ে আমারও আছে। মনে মনে ঠিক করলাম, বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রীকে বলবো, তার সবচেয়ে ভালো শাড়িটা যেন মেয়েকে পরতে দেয় এবং পরার পর মেয়েকে বলবো, 'মা, এবার আমার পা ছুঁয়ে সালাম করো তো দেখি।' শুনে আমার স্ত্রী নিশ্চয় বলবে, 'এমন পাগলামির কোনো মানে হয়!' বলে তো বলুক।
এই মুহূর্তে আমি শুধু কল্পনায় দেখতে চেষ্টা করছি, শাড়িতে আমার মেয়েটাকেও কেমন অপূর্ব দেখায়--রিমি মেয়েটারই মতো। সোলতান সাহেবের মতো আমিও রাজা বা মহারাজা নই কেউ, আমারও নেই কোনো সাম্রাজ্য-- তবু কল্পনায় আমি দেখছি, শাড়িতে আমার মেয়েটাকেও দেখতে অপূর্ব কোনো রাজকন্যার মতোই লাগছে। সেই রাজকন্যা--যার জন্য কোনো-এক রূপবান রাজপুত্র অপেক্ষায় থাকে, তৃষিত তৃষ্ণা নিয়ে বুকে--হাজার বছর ধরে।



Comments
Post a Comment