গল্পের গল্প

শহিদুল ইসলাম আকাশ


ছোটবেলায় খুব ইচ্ছে ছিলো, বড় হয়ে বেশ একটা গতির জীবন বেছে নেবো। আজ এই শহর তো কাল ওই শহর, আজ এই দেশ তো কাল ওই দেশ--সারা পৃথিবীর সব জায়গায় খুব করে ঘুরে বেড়াবো। মাথার উপর আকাশে হঠাৎ কোনো বিমান উড়ে যেতে দেখলে, তাকিয়ে থাকতাম অপলক। বিমান তুমি কোন সুদুরে ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে যাও! সেই গন্তব্য আমারও দেখবার বড় সাধ যে হয়!

কলেজে পড়াকালীন সময়ে, বিদেশে না-হলেও, বন্ধুদের সাথে দেশের এই শহর ওই শহর ঘুরে বেড়িয়েছি খুব। যখনই ইচ্ছে হতো, বেরিয়ে পড়তাম। সেই কবে থেকে তাও হয় না। নিতান্ত কাজে মাঝেমধ্যে দেশের দুয়েক শহরে যেতে হয়, যাই। কিন্তু সেখানে রোমাঞ্চ থাকে না। কাজের মধ্যেই ডুবে থাকতে হয়।

দুঃখ হয়। মানুষের জীবনটা এমন কেন! যা সে চায়, তা তার পাওয়া হয় না। যা সে চায়নি কখনোই, তা-ই পায়ের কাছে এসে লুটিয়ে পড়ে। অদ্ভুত!

দৈনন্দিন জীবনে যদিও আমি খুব ব্যস্ত একজন মানুষ, তবু এই জন্য এক ধরনের গভীর শূন্যতা ও হাহাকার আছে আমার। মাঝেমধ্যে তা খুব করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সেই শূন্যতা ও হাহাকার আমি আমার লেখার মাধ্যমে কাটাবার চেষ্টা করি।

এই এখন যেমন নতুন একটা গল্প লিখবার জন্য ভাবনাচিন্তা করছি। গল্পের নায়ক-নায়িকাদের আমি ইতালির সিসিলি সমুদ্রসৈকতে নামিয়ে দিয়েছি। সিসিলিতে কখনো আমার যাওয়া হয়নি, আমার এক বন্ধু একবার গিয়েছিলো, তার মুখে শুনা বর্ণনাটুকু কাজে লাগাচ্ছি।

গল্পের নায়কের নাম দিয়েছি রাজু। নায়িকার নাম কণা। রাজু আর কণা ভিনদেশের সেই সমুদ্রসৈকত ধরে হাঁটছে। পাশাপাশি। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে দু'জনে।

রাজু: ভালোবাসো?

কণা: হুম। অনেক। অনেক।

রাজু: ভুলে যাবে না তো?

কণা: কক্ষনো না।

রাজু: যদি যাও?

কণা: যদি যাই, সেদিন এই পৃথিবীর কোথাও আর একটাও ফুটবে না ফুল। কোনো গাছে ডাকবে না পাখি। আকাশ হবে চিরঅমানিশার অন্ধকারে ঢাকা, এই পৃথিবীতে সকাল আসবে না আর কোনোদিনও।

আমি লেখা এগিয়ে নিচ্ছি। কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সিসিলির সৈকত। সেই কল্পনা বাস্তবের চেয়ে কোনো অংশে কম কিছু নয়। সমুদ্রের নীলাভ জলরাশি এসে আছড়ে পড়ছে রাজু আর কণার পায়ের কাছে। এক পর্যায়ে কণা হাত বাড়িয়ে রাজুর হাত ধরলো। হাতে হাত রেখে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে তারা দু'জন অনেক দূরে হেঁটে যেতে লাগলো। যেন এই চলা শেষ হবে না কোনোদিন। অনেকটা দূরে গিয়ে তারা পরস্পর খুব ঘনিষ্ট হলো। চুমুটুমুও খাচ্ছে হয়তোবা। খেলে খাক।

আমার হয়নি, না হোক। যে জীবন দোয়েলের, ফড়িঙের--সে জীবনের সাথে আমার গল্পের চরিত্রগুলোর হয়ে যাক দেখা।

Comments