মিলনে ও বিরহে #১

শহিদুল ইসলাম আকাশ

একটা আকাশ সমস্তটা জুড়ে
জনম জনম মেঘ বুনেছি
কিছু জেনে আর কিছুটা ভুলেই।

মন খারাপের গভীর রাত্তিরে
মন বাড়িয়ে সে আকাশকে ছুঁই__
একূল-ওকূল দু'কূল ভেসে বৃষ্টি নামে ছুঁলেই।

২.
বৃষ্টি দেখো,
আকাশ ভেঙে উথালপাতাল পড়ে;
কেউ দেখে না,
বৃষ্টি কেমন আমার বুকেও ঝরে।

৩.
প্রেম বা মিলন নয়, শুধু জানে,
এ প্রাচীন রাত__
সমগ্র সৃষ্টির মূল কথা 
মূলত বিষাদ।

৪.
সেই পাখি একদিন হঠাৎ হয়ে যায় নিখোঁজ__
যে পাখি নীড়ে ফিরে যেতো সন্ধ্যা ঘনালেই রোজ।

৫.
তৃষ্ণা কি শুধু জল খাওয়ার লোভ?
জলেরও থাকে গোপন তৃষ্ণা খুব__
সে তো শুধু জানে অতলান্ত নদী।

মোহনার খুঁজে জল বয় নিরবধি।

৬.
গুচ্ছ কিছু মেঘ পাঠালাম
ঠিকানাবিহীন খামে,
অন্য কোথাও বৃষ্টি ঝরুক
শুধুই তোমার নামে।

৭.
তোমার হাতে আমার যুগল হাত রাখতে দিও,
তুমি সাত জনমের ভালোবাসা বিনিময়ে নিও__
জীবন যেদিন থমকে যাবে তিন প্রহরে এসে,
সেদিন হলেও চোখের জলে আমায় ডেকো, 'প্রিয়।'

৮.
'কাঁদবো কেন,
আমার এমন কীইবা দুঃখ বলো?'__
বলতে গিয়ে চোখের কোণে জমাটবাধা জল
কেন তবে আড়াল করতে হলো!

৯.
এই আমি দেখো চোখ রাখলাম চোখে,
তুমি পলক তুলে এই চোখে তাকাও;
নীল সরোবর তোমার চোখের বুকে__
তুমি সে সরোবর আমার চোখে দাও।

 ১০.
কতো যে দহন জমে থাকে, অভিমানের ফানুশ;
এক ছোট্ট বুকে কতো কান্না জমিয়ে রাখে মানুষ!

১১.
গাছেরা যেমন দাঁড়িয়েই থাকে ঠায়,
হোক কিছু ক্ষোভ কিছুবা অহংকারে__
তোমার আশায় দাঁড়িয়ে আছি তেমন,
সেই কতোকাল বিরান পথের ধারে!

১২.
একটা ভীষণ নিঝুম রাত
তোকেই দেবো, তোকে;
আমায় বলিস রাখা যতো
গল্পগাঁথা বুকে।

১৩.
ভরদুপুরেই সন্ধ্যা আনে
কৃষ্ণকলি মেঘ,
মানবজীবন ঘিরে থাকে
অবাধ্য আবেগ।

১৪.
প্রিয়দর্শিনী বৃষ্টি যখন তোমায়-আমায় ছুঁলো__
জলের আগুনে উষ্ণতা পেলো যুগল ইচ্ছেগুলো।

১৫.
কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙা রঙ,
ছুঁয়েছে আমার মনেও।

সেই একই রঙ তুইও খানিক নিলে,
বুঝতি তবে,
প্রেমই সত্য দারুণ দহনেও।

১৬.
তারপর একদিন তুমিও জানবে, 
পথের শেষে, ক্লান্ত রথ থমকে গিয়ে__
আমরা বাঁচি এই পাথর পৃথিবীতে
সম্বল শুধুই কাঁচের হৃদয় নিয়ে। 

১৭.
আদিগন্ত ধূধূ মরুভূমি,
পলকেই হবে
গহীন জলের নদী__

ভালোবাসো যদি।

১৮.
আমায় বুকে রেখো
জাপটে ধরে থেকো
চোখ বুজে আলোর খেলা কেমন তুমি দেখো

খুব যতনে মনের কোণে একটি স্বপ্নই এঁকো।

১৯. মেঘে মেঘে খবর পাঠাও,
তুমি ভালো নেই;
চোখের জল আড়াল করি,
বৃষ্টি নামে যেই।

২০
মেঘ তোমার চোখের জলে
সে কার দুখের কথা বলে?

তোমাকেও কি ছেড়েছে কেউ ছলে?

২০.
ঢেউয়ে ঢেউয়ের ভেলায় ভেসে সদরেঅন্দর 
সাত সমুদ্দুর পাড়ি দিলাম ঢেউয়ে বেঁধে ঘর

পাইনি তবুও একলা নিজের সেই সে বন্দর।

২১.
দিনে দিনে আমারও জমেছে
কতো হৃদয়ের ভুল--
সেই কথা জানে শুধু
দূর আকাশের ওই চাঁদ
আর তার জোছনার ফুল।

২২.
বনের শোভিত কদম ফুলই জানে,
আমার একাকার হাহাকারের মানে--
জলের কাছে এই জীবন রেখে বাজি,
তোমার জন্য আমি বর্ষা হতে রাজি।

২৩.
গ্রহান্তরে ভীড় জমালে নির্জনতা,
বুকের ভেতর সাতসতেরো এই যে কথা,
আগল খুলে তোমায় আমি বলতে পারি--
আমায় তুমি একটু যদি ভালোবাসো, নারী।

২৪.
ফুলের উপর বেঁচে থাকা শেষ পরাগের
সুবাসও যদি নিতে,
ওই ওইটুকুই ছোঁয়াও পারতো আরেক
নতুন জনম দিতে।

২৫.
কেন হঠাৎ ছাড়িয়ে নিলাম
হাত থেকে হাত
কেন হঠাৎ থামিয়ে দিলাম
ফুলঝুরি রাত

হঠাৎ কেন ভাসিয়ে দিলাম
অথৈজলে নাও
হঠাৎ কেন উড়িয়ে দিলাম
নাটাই ছিলো যা-ও--

এমন প্রশ্ন যখন তোমার
ছায়ার মতো পিছু,
বুঝবে তখন আজো আছে
মনে রাখার কিছু।

২৬.
সব পথই তো ঘুরেফিরে
আবার শুরুর নীড়ে,
কথা রইলো দেখা হবে--

শীত বা কোনো দাহের  রাতে,
সেই তোমারই সাথে,
হয়তোবা কোনো মুহুর্মুহু বৃষ্টির বিপ্লবে।

দেখা হবে, দেখা হওয়ার কথা দিলাম।
এক জীবনের কষ্ট তো বুকেই নিলাম--
সেই কতো দিন গেলো, কতো কতো মাসও!

তখন তুমি দেখো
তোমার চোখের অশ্রু লুকিয়ে রেখো,
আমি ভুল করে যদি ভেবে বসি--আজো ভালোবাসো! 

২৭.
খুব কাছে বা দূর
হোক সাত সমুদ্দুর--
তাতে এমন কীইবা যায় আর আসে?

জীবনের পিছু মৃত্যুর থাকে তাড়া
ভালোবাসা তবু ভালোবাসা ছাড়া
আর তো কিছুই 
দাবি করে না ভালোবাসার কাছে।

২৮.
তুমি হাত বাড়িয়ে যদিবা রাত ডাকো,
আঁধারের গায়ে জমকালো রঙ আঁকো__
একটি জোনাকি কেমন সাজবে দেখো,
তোমার বিষাদ তার কাছে জমা রেখো।

২৯.
কেউ জানে না, তুমিও না, 
তুমি আমার কেমন ভীষণ চেনা;
তোমার কাছে আমার কেমন
এক জীবনের অপরিশোধ্য দেনা!

দূর-আকাশের তারার ভীড়ে তবু
যেন তুমি আমারই সেই তারা__
হাত বাড়িয়ে ধরতে গেলে যেই
বুঝতে পারি কেমন পাগলপারা! 

৩০.
যে বাতাসে উড়াও তোমার
স্মৃতির বোনা শাড়ি__
সে আমার গভীর গোপন
দীর্ঘশ্বাসেই ভারী !

Comments