নেতা ও কর্মীর গল্প
শহিদুল ইসলাম আকাশ
কিন্তু পরের মাসে যখন দলের ওয়ার্ড কমিটি হয়, তখন সে কর্মীকে উপেক্ষা করে অন্য একজনকে সভাপতি করা হয়। বিষয়টা নিয়ে কর্মী যখন নেতার কাছে জানতে চায়, তখন নেতা বলেন, 'এই কয়দিনে তুই বেশ দক্ষ কর্মী হয়ে উঠেছিস, ওয়ার্ড কমিটিতে তোকে মানাবে না। ধৈর্য ধর, ছয় মাস পরে দলের নতুন ইউনিয়ন কমিটি হবে, সেটাতেই তোকে সভাপতি করবো। মন দিয়ে পলিটিক্স কর।' এটুকু বলে নেতা তাঁর কর্মীকে আরো কিছু নতুন কাজের কথা বলতে লাগলেন, 'আমাদের প্রতিপক্ষ গ্রুপের কিছু ছোকরাছাকরা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে, তাদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে। তুই সেই ব্যবস্থা কর। ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি তোকে এবার করবোই, ইনশাআল্লাহ।' কর্মী সেই আগের মতো সম্মতি জানায়। পরের দিন থেকে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে নেমে পড়ে। এবং এতেও কর্মী সফল হয়।
কিন্তু ছয় মাস পর যখন ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়, এই কমিটিতেও সেই কর্মীকে সভাপতি করা হয় না। এই বিষয়েও নেতার কাছে কর্মী জানতে চাইলে নেতা বলেন, 'তোর নিজের বেশ চমৎকার একটা অবস্থান গড়ে উঠেছে, দলে তোর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে, এক বছরের মধ্যে দলের নতুন উপজেলা কমিটি হবে, সেই কমিটিতে তোকে সভাপতি করতে বলে দিয়েছি। অপেক্ষা কর। এইসব ইউনিয়ন ফিউনিয়ন কমিটি দিয়ে কী হবে?' তারপর নেতা বললেন, 'উত্তরে আমার অবস্থান একটু ঢিলেঢালা, প্রতিপক্ষের অবস্থান বেশ জোরালো। তুই কিছুদিনের জন্য উত্তরে থাকবি, সেখানে আমার বিপক্ষের মানুষদের রাতের ঘুম হারাম করে দিবি। তাদের বুঝিয়ে দিবি আমি কী জিনিস!' নেতার এই নির্দেশও মেনে নেয় কর্মী। উত্তরে কয়েক মাস দলবল নিয়ে থেকে সেখানে তার নেতার দাঁড়াবার ব্যবস্থা করে দেয়। নেতা মহাখুশি, কর্মীর পিঠ চাপড়ে বলেন, 'দলের আগামী উপজেলা কমিটিতে তুই সভাপতি, কনফার্ম।'
কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা হয় না। নতুন উপজেলা কমিটি গঠিত হয়, সেখানেও এই কর্মীর সভাপতি তো দূরের কথা, একটা সাধারণ পদও তার কপালে জুটে না। যথারীতি নেতার কাছে আর্জি পেশ করে কর্মী, নেতাও যথারীতি তার সেই পুরোনো ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যান, বলেন, 'তুই আছিস উপজেলা কমিটি নিয়ে, আর আমি আছি তোকে দলের জেলা কমিটির সভাপতি করার চিন্তায়। এক বছরের মধ্যে জেলা কমিটিও গঠন করা হবে, সেই কমিটিতে তুই-ই সভাপতি হবি। একটু ধৈর্য ধর। সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে আগে সব বিরোধী পক্ষকে কীভাবে ঘায়েল করা যায়, সে কাজে মনোযোগ দে। জেলা কমিটির সভাপতির পদ তোর জন্য ঠিকঠাক করার ব্যাপারটা আমি দেখছি।'
নেতার প্রতি অনুরক্ত কর্মী তখনো নেতার কথায় বিশ্বাস রাখে, হয়তো তার নেতা সত্যিই তাকে পরের জেলা কমিটির সভাপতি করবেন।
কর্মী অপেক্ষায় থাকে, বুঝে উঠতে পারে না যে, তার এই অপেক্ষা কখনোই ফুরোবে না, কোনোদিনই না।
Comments
Post a Comment