'দেশ কি স্বাধীন হইছে?'
একাত্তরের নভেম্বরের কোনো এক সময়। এক রাতে পাকিস্তানিবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা ঘিরে ফেললো একটি গ্রাম। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে তারা এই গ্রামের দিকেই আসছে, এমন খবর আগেই চাউর হয়ে ছিলো গ্রামটির সর্বত্র।
প্রচণ্ড শীত। পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের ভয়ে সেই শীত উপেক্ষা করে গভীর রাতে গ্রামের নিরীহ মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে একটি বেশ বড়সড় পুকুরে নেমে পড়লো। পিনপতন নিরবতা। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। সেই পুকুরে জীবন বাঁচাতে ছয় মাস বয়সী পুত্রসন্তানকে নিয়ে নেমে পড়লেন এক মাও।
থেমে থেমে কেঁদে উঠছিলো শিশুটি। এক পর্যায়ে শিশুটির কান্না আর থামছিলোই না। পুকুরে থাকা অন্যরা এতে বেশ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলো, কান্নার শব্দ শুনে পাকিস্তানিরা যদি এসে যায়, এসে যদি হানা দেয়! সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলেন মা, তাতেও কাজ হলো না।
উপায়ন্তর না-দেখে প্রবল শীতের মধ্যে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মা তার শিশুপুত্রের মুখে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে থাকলেন। যাতে কান্নার শব্দ শুনা না-যায়।
সেই বীভৎস, ভয়াবহরকম ভয়ের মুহূর্তে সময়জ্ঞান ছিলো না সে মায়ের, কতোক্ষণ তিনি তাঁর শিশুপুত্রের মুখ চেপে ধরে ছিলেন!
একটা পর্যায়ে যখন তিনি সংবিৎ ফিরে পেলেন, তখন তিনি খেয়াল করলেন, তাঁর প্রিয়তম সন্তান আর বেঁচে নেই। হঠাৎ তাঁর বুকের ভেতরটা খালি খালি হয়ে যেতে লাগলো। বুক ফেটে কান্না আসছিলো তাঁর। কিন্তু পুকুরের চারপাশে জীবন বাঁচাতে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা মানুষগুলোর কথা ভেবে তিনি কাঁদতেও পারছিলেন না। নিজের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু এই এতোগুলো মানুষকে তো বাঁচাতে হবে! সে কী বেদনার!
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তবু পাকিস্তানিদের হাত থেকে মানুষগুলো বাঁচতে পারেনি। পাকিস্তানিরা এক এক করে সবাইকে পাড়ে উঠে আসতে বললো, এক এক করে সবাই উঠে আসলো। সারি করে দাঁড় করে একের পর এক গুলি করে সবাইকে হত্যা করা হলো।
শুধু সেই মার পাড়ে উঠে আসা হয়নি। গুলির আকাশ কাঁপানো শব্দেও তাঁর কোনো ভাবান্তর হলো না, মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে তেমনই নির্বাক তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন শীতার্ত জলে। তাঁর সমস্ত পৃথিবীটাই যেন হঠাৎ থমকে গেছে বেদনার সেই নীল জলে।
সবাইকে মেরে ফেলা হলেও, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, এই মা শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেলেন। পাকিস্তানিরা পুকুর থেকে এক পর্যায়ে তাঁকে পাড়ে তুলে আনলেও, মৃতের মতো তাঁর নিথর দেহ দেখে তারা লাশের স্তূপের মাঝে সেই মাকেও ফেলে রেখে চলে যায়।
দেশ স্বাধীন হলো। পরবর্তীতে এই মা আরো কিছুকাল এই দেশের স্বাধীন বাতাসে বেঁচেবর্তে ছিলেন। কিন্তু তাঁর সে বেঁচে থাকা স্বাভাবিক ছিলো না__হয়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন।
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন, হঠাৎ কোনো কোনো পথচারীকে থামিয়ে তিনি বলে উঠতেন, 'দেশ কি স্বাধীন হইছে? পাকিস্তানিরা কি অহনো আছে? আমার পুলাডারা কহন থাইক্যা ঠাণ্ডা পানির মধ্যে লুকাইয়া রাখছি। দেশ যহন স্বাধীন অইবো, তহনই আমার পুলারা আমি তুইল্যা আনবো। কও না কেন, দেশ কি স্বাধীন অইছে! পাকিস্তানিরা কি আছে অহনো? আমার অত্তোটুকু পুলা, হে কি দোষ করছে! তারে ক্যান পাকিস্তানিরা মাইরা ফেলতে চায়!'
প্রচণ্ড শীত। পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের ভয়ে সেই শীত উপেক্ষা করে গভীর রাতে গ্রামের নিরীহ মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে একটি বেশ বড়সড় পুকুরে নেমে পড়লো। পিনপতন নিরবতা। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। সেই পুকুরে জীবন বাঁচাতে ছয় মাস বয়সী পুত্রসন্তানকে নিয়ে নেমে পড়লেন এক মাও।
থেমে থেমে কেঁদে উঠছিলো শিশুটি। এক পর্যায়ে শিশুটির কান্না আর থামছিলোই না। পুকুরে থাকা অন্যরা এতে বেশ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলো, কান্নার শব্দ শুনে পাকিস্তানিরা যদি এসে যায়, এসে যদি হানা দেয়! সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলেন মা, তাতেও কাজ হলো না।
উপায়ন্তর না-দেখে প্রবল শীতের মধ্যে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মা তার শিশুপুত্রের মুখে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে থাকলেন। যাতে কান্নার শব্দ শুনা না-যায়।
সেই বীভৎস, ভয়াবহরকম ভয়ের মুহূর্তে সময়জ্ঞান ছিলো না সে মায়ের, কতোক্ষণ তিনি তাঁর শিশুপুত্রের মুখ চেপে ধরে ছিলেন!
একটা পর্যায়ে যখন তিনি সংবিৎ ফিরে পেলেন, তখন তিনি খেয়াল করলেন, তাঁর প্রিয়তম সন্তান আর বেঁচে নেই। হঠাৎ তাঁর বুকের ভেতরটা খালি খালি হয়ে যেতে লাগলো। বুক ফেটে কান্না আসছিলো তাঁর। কিন্তু পুকুরের চারপাশে জীবন বাঁচাতে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা মানুষগুলোর কথা ভেবে তিনি কাঁদতেও পারছিলেন না। নিজের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু এই এতোগুলো মানুষকে তো বাঁচাতে হবে! সে কী বেদনার!
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তবু পাকিস্তানিদের হাত থেকে মানুষগুলো বাঁচতে পারেনি। পাকিস্তানিরা এক এক করে সবাইকে পাড়ে উঠে আসতে বললো, এক এক করে সবাই উঠে আসলো। সারি করে দাঁড় করে একের পর এক গুলি করে সবাইকে হত্যা করা হলো।
শুধু সেই মার পাড়ে উঠে আসা হয়নি। গুলির আকাশ কাঁপানো শব্দেও তাঁর কোনো ভাবান্তর হলো না, মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে তেমনই নির্বাক তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন শীতার্ত জলে। তাঁর সমস্ত পৃথিবীটাই যেন হঠাৎ থমকে গেছে বেদনার সেই নীল জলে।
সবাইকে মেরে ফেলা হলেও, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, এই মা শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেলেন। পাকিস্তানিরা পুকুর থেকে এক পর্যায়ে তাঁকে পাড়ে তুলে আনলেও, মৃতের মতো তাঁর নিথর দেহ দেখে তারা লাশের স্তূপের মাঝে সেই মাকেও ফেলে রেখে চলে যায়।
দেশ স্বাধীন হলো। পরবর্তীতে এই মা আরো কিছুকাল এই দেশের স্বাধীন বাতাসে বেঁচেবর্তে ছিলেন। কিন্তু তাঁর সে বেঁচে থাকা স্বাভাবিক ছিলো না__হয়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন।
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন, হঠাৎ কোনো কোনো পথচারীকে থামিয়ে তিনি বলে উঠতেন, 'দেশ কি স্বাধীন হইছে? পাকিস্তানিরা কি অহনো আছে? আমার পুলাডারা কহন থাইক্যা ঠাণ্ডা পানির মধ্যে লুকাইয়া রাখছি। দেশ যহন স্বাধীন অইবো, তহনই আমার পুলারা আমি তুইল্যা আনবো। কও না কেন, দেশ কি স্বাধীন অইছে! পাকিস্তানিরা কি আছে অহনো? আমার অত্তোটুকু পুলা, হে কি দোষ করছে! তারে ক্যান পাকিস্তানিরা মাইরা ফেলতে চায়!'
শহিদুল ইসলাম আকাশ
অসাধারণ ♥♥♥
ReplyDeleteধন্যবাদ ভাই।
Delete